মুহিউদ্দীন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদন্ড যে কোনো সময় : রাজশাহী কারাগারে প্রস্তুত ফাঁসির মঞ্চ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকরের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে স্বজনদের ডেকে পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। সকালে ও দুপুরে দুই আসামীর স্বজনরা দণ্ডপ্রাপ্তদের সঙ্গে দেখা করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল।
কারা সূত্র জানায়, সকাল ১০টার কিছু পরে একটি কালো রঙে হাইস মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট করে কারাগারের ভেতরে যান সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউউদ্দিনের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও কয়েকজন স্বজন। ফরিদপুরের ভাঙায় তাদের বাড়ি। স্থানীয় কাজলার কড়ই তলা এলাকায় থাকেন তার পরিবারের সদস্যরা। ১২টার কিছু পরে তারা কঠোর গোপনীয়তায় সাক্ষাৎ শেষে চলে যান।
দুপুর ১টার কিছু পরে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যান আরেক ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামী জাহাঙ্গীরের স্বজনরা। কারাগারের সামনে উপস্থিত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ৩৫-৩০ জন এসেছেন। গত রবিবারই তাদের চিঠি দিয়ে সাক্ষাতের জন্য ডাকা হয়েছিলো। ভেতরে ঢোকানোর সময় তাদের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে ছিলেন জাহাঙ্গীরের বাবা আজিম উদ্দিন। তিনি অসুস্থ, হুইলচেয়ারে বসে ছেলের সঙ্গে শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করতে যান। এছাড়া ছিলেন জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সোহরাব আলী, ছোট ভাই মিজানুর রহমান। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীর খোঁজাপুর এলাকায়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কারাগারের পেছন গেট দিয়ে তাদের বের করে দেওয়া হয়। কথা বলতে নিষেধ করা হয় গণমাধ্যমের সঙ্গে। তারপরেও জাহাঙ্গীরের বড় ভাই সোহরাব আলী জানান, এটি শেষ সাক্ষাত বলে তাদের জানানো হয়েছে। তার ভাই শুধু কেঁদেছেন। আর কোনো কথা বলেননি। সাক্ষাতের সময় খাঁচা থাকায় কেউ-ই তার ভাইকে ছুঁয়ে দেখতে পারেননি।
জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত রবিবার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করিনি। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর আজ (মঙ্গলবার) আমরা দেখা করেছি। আমাদের পরিবারের প্রায় ৩৫-৪০ জন দেখা করতে এসেছিলো।’

এদিকে মঙ্গলবার রাতেই অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছিলো। দুপুরে কারাগারের ভেতরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, ডিআইজি প্রিজন ও কারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা সভা করেছেন। তবে এনিয়ে কোন বক্তব্য দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। তবে সিনিয়র জেল সুপার জানান আজ হচ্ছে না। যে কোনো মুহুতে ফাসি কার্যকর করা হবে।
এর আগে গত ২০ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। আবেদনে জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়। গত ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে এস তাহের হত্যা মামলার চূড়াণ্ড রায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেন, আপিল বিভাগ আসামিদের রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে এই রিট শোনার সুযোগ নেই। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হন অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একটি ম্যানহোল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০০৮ সালের ২২ মে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক এস তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের আত্মীয় আবদুস সালামকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। অভিযোগপত্রভুক্ত অপর দুই আসামি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সীকে খালাস দেন আদালত।
আপিলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি নাজমুল আলম ও আবদুস সালামের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকচ হয়েছে। দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি ৫ জুলাই ডাকযোগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। তখন কারা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, জেল কোড অনুযায়ী এ ধরনের চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়।


প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩ | সময়: ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ