বাংলাদেশ থেকে আরো জনবল নিতে আগ্রহী ইতালি

সানশাইন ডেস্ক: কৃষি ও সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। বাসস জানায়, রোমে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) ‘ফুড সিস্টেম’ সম্মেলনের ফাঁকে ইতালির কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেসকো ললোব্রিগিদা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেডোসি এবং বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিও সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেই তারা ওই আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।
এফএও সদর দপ্তরে সোমবার ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।তিনি বলেন, “ইতালি তার সেবা ও কৃষি খাতে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিতে চায়।” মোমেন জানান, অবৈধ শ্রমিকদের বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালির মন্ত্রীদের বলেন, তার দেশ সবসময়ই শ্রমিকদের বিদেশে অবৈধভাবে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করে।
বৈধ ও অবৈধ-দুই ধরনের শ্রমিকই যে ইতালি ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, সে কথা বৈঠকে বলেন শেখ হাসিনা। সুশিক্ষিত ও দক্ষ, কিন্তু অবৈধ, এমন শ্রমিকদের বৈধ করার কথাও তিনি ইতালির মন্ত্রীদের বলেন। ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইতালি খুবই খুশি যে বাংলাদেশ সব সময়ই বৈধ উপায়ে শ্রমিক অভিবাসনে সহায়তা করছে।” ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড অফ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি) এর প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে গম ও ভোজ্যতেল উৎপাদন বাড়াতে আইএফএডির সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি ক্ষুদ্র কৃষি-উদ্যোগ বিপণন এবং একটি দক্ষ খাদ্য সঞ্চয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্যও ইএফএডি প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি হেনসলি ম্যাককেইনও একই দিনে এফএও সদর দপ্তরে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে বলেন, বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য, যাদের খাদের‌্য জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ১২ ডলার থেকে ৮ ডলারে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ সফলভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পেরেছে। শুধু শস্য নয়, মাছ ও অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
সিন্ডি হেনসলি ম্যাককেইন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী, যিনি ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে তিন মাসের একটি বাংলাদেশি মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী সোমবার অন্য সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে এফএও সদর দপ্তরে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু ডংইউ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সম্প্রসারণে ডব্লিউএফপি-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
বাংলাদেশ ২০১০ সালে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করে এবং সেই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ১০৪টি উপজেলার ১৫,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৩ লাখ শিক্ষার্থী খাবার পাচ্ছে। নতুন চুক্তির আওতায়, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ১৫০টিরও বেশি উপজেলায় সম্প্রসারিত হবে, তাতে সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে হবে ৩৭ লাখ। এছাড়া বিস্কুটের পরিবর্তে ফল, দুধ, রুটি, ডিম ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হবে।
স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মোমেন বলেন, এর ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৭.৫ শতাংশ কমেছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ১৪ শতাংশ বেড়েছে।


প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ