বাংলাদেশকে হারানোর আবেশে বিশ্বকাপ নিয়ে বড় স্বপ্ন আফগানিস্তানের

স্পোর্টস ডেস্ক: বড় আশা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে প্রতিবার হতাশাই সঙ্গী হয়েছে আফগানিস্তানের। দুই আসরে মোটে একটি ম্যাচ জিততে পেরেছে তারা। গতবার সবগুলো ম্যাচ হেরে বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবিরা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের আসরে ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখছেন দলটির সাবেক গতি তারকা ও এখনকার বোলিং কোচ হামিদ হাসান।
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে চোখ রেখে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে এসেছে আফগানরা। দাপুটে ব্যাটিং-বোলিংয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে তারা। দলকে এমন চেহারায় দেখে সামনের বড় দুই টুর্নামেন্টেও স্বপ্নের পরিধিটা বড় করছেন বোলিং কোচ হামিদ। বৃষ্টিতে ৪৩ ওভারে নেমে আসা প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে ১৬৯ রানের বেশি করতে দেয়নি আফগানিস্তান। দ্বিতীয়টিতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানের সেঞ্চুরিতে তারা করে ৩৩২ রান। দুই ম্যাচেই দারুণ বোলিং করেন ফজলহক ফারুকি, মুজিব উর রহমান, রশিদ খান, মোহাম্মদ নবিরা। সফরকারীরা পায় অনায়াস জয়।
গত বিশ্বকাপের পর থেকেই মূলত ওয়ানডেতে ভালো খেলছে আফগানরা। ২৩ ম্যাচে তাদের জয় ১৪টিতে, হেরেছে ৮টি। এই সময়ে বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কার মতো দলকেও হারিয়েছে তারা। নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড তো তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। উত্তরসূরিদের এমন পারফরম্যান্সে সামনের বিশ্বকাপে দারুণ কিছুর স্বপ্ন বুনছেন দেশটির প্রথম তারকা হামিদ। মূলত পেসার হলেও, বিশ্ব আসরে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের একমাত্র জয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ১৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
পরের আসরে আফগানিস্তানের টানা ৯ পরাজয়ের ছয়টিতে দলে ছিলেন হামিদ। সেবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আফগানদের নিয়ে বাজি ধরার লোক খুব কম ছিল না। উঠতি শক্তি হিসেবে তাদের সমীহ করছিল প্রায় সব দল। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে এর প্রতিফলন পড়েনি। তবে এবার রশিদ-নবিদের নিয়ে বড় আশা আফগান দলের। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে নিজেদের স্বপ্নের কথা বলেন দলের বোলিং কোচ।
“এবার আমরা বড় চিন্তা করছি। খুব ভালো ফলাফলের আশা করছি। আমাদের দল যেভাবে পারফর্ম করছে, সারা বিশ্ব এখন আফগানিস্তানকে নিয়ে জানে। ছেলেরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে লড়ছে, চেষ্টা করছে। এই ক্রিকেটারদের মাধ্যমে আমরা আরও বড় আশা দেখতে পারব। আমাদের খুব ভালো বিকল্পও আছে। এবারের বিশ্বকাপ আফগানিস্তানের জন্য ভালো যাবে আশা করি। হয়তো আমরা ভালোভাবে কিছু ম্যাচ জিততে পারব।”
আফগানিস্তানের বড় শক্তি তাদের বৈচিত্রময় ও ধারাল বোলিং আক্রমণ। চলতি সিরিজেও তা ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা সামনের দুই বড় টুর্নামেন্টেও দেখতে চান হামিদ। “সবশেষ দুই ম্যাচে তারা (বোলাররা) যেভাবে শুরু করেছে, দুর্দান্ত। সামনের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে আমরা এমন কিছুরই অপেক্ষা করছি। এই সিরিজের পর আমাদের কিছু দিন ছুটি আছে। তবু ক্রিকেটারদের ছন্দ ধরে রাখতে আমরা কাজ করে যাব। হয়তো পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ হতে পারে। এখনও নিশ্চিত নয়। এরপর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ। তো আমরা মোমেন্টাম বজায় রাখার চেষ্টা করব।”
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে যে কোনো বিচারে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু মাঠের লড়াই শুরুর পর একবারের জন্যও ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা। দুই ম্যাচেই দেখা গেছে আফগানদের একপেশে আধিপত্য। পরিশ্রমের পথ ধরেই এমন সাফল্য এসেছে, বললেন হামিদ।
“এমন নয় যে খুব সহজেই আমরা হারিয়েছি বাংলাদেশকে। অনেক অনুশীলন করে তবেই নিজেদের প্রস্তুত করেছি। কিছুটা ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছি, হয়তো বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থেকেছি। যে কারণে আমাদের ব্যাটসম্যান বা বোলারদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। এটিই হয়তো মূল বিষয়। আমরা হয়তো বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলাম এবং ফল দেখাই যাচ্ছে।”
“বাংলাদেশের মাঠে বাংলাদেশকে হারানো সহজ নয়। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। অনুশীলনে ৫-৬ ঘণ্টা ধরে খেটেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দলের ভেতরের বিশ্বাস। এটি যে কারও জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি নিজের ওপর বিশ্বাস থাকে, তাহলে যে কাউকে হারানো সম্ভব।” এই বিশ্বাসকে সঙ্গী করেই মঙ্গলবার বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার চেষ্টায় নামবে তারা।


প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ