পরিসংখ্যানের আলোয় তামিমের ক্যারিয়ার

স্পোর্টস ডেস্ক: দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান-এই পরিচয় অনেক দিন ধরেই সঙ্গী তামিম ইকবালের। বিদায় বেলায়ও তা অটুট। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকগুলো ‘প্রথম’ দেখেছে তার হাত ধরে। তার ব্যাট দিয়ে এসেছে দারুণ সব মাইলফলক।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে ক্যারিয়ারের পথচলা শুরু, তা থেমে গেল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। এই ১৬ বছরে অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তামিম, রাঙিয়েছেন রেকর্ড বইয়ের নানা পাতা। সেসবের কিছুটা তুলে ধরা হলো এখানে।
৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ২১টিতে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন অধিনায়ক তামিম। সাফল্যের শতকরা হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশকে অন্তত ৫ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তামিমই সেরা। ৮৮টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে ৫০টিতে জয় পাওয়া মাশরাফির সাফল্যের শতকরা হার ৫৮.১৩ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের রান ১৫ হাজার ১৪৮। আর কেউ ছুঁতে পারেননি ১৫ হাজারের সীমানা। ১৪ হাজার ২৪১ রান নিয়ে দুইয়ে মুশফিকুর রহিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫টি সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন তামিম। বাংলাদেশের হয়ে ২০টিও নেই আর কারও। ১৯ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে মুশফিকুর রহিম। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তামিমের ফিফটি ৯৪টি। এখানে তার ওপরে আছেন কেবল সাকিব আল হাসান (৯৬টি)।
অন্তত ৫০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটিং গড় তামিমের, ৩৫.৩৯। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে। ১ হাজার ৭৫৩টি চার মেরেছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪২৯টি চার মেরেছেন সাকিব।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে ছক্কা মারার সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম। এই সংস্করণে ১০৩টি ছক্কা তার। টেস্টেও সবচেয়ে বেশি ৪১ ছক্কা মেরেছেন তিনি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে দেশের রেকর্ড ১৮৮ ছক্কা তার। ১৬৫ ছক্কা মেরে দুইয়ে মাহমুদউল্লাহ।
ওয়ানডেতে ৮ হাজার রান করা বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম। ৮ হাজার ৩১৩ রান নিয়ে শেষ হলো তার ক্যারিয়ার। দুইয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমের রান ৭ হাজার ১৮৮। ওয়ানডেতে তামিমের ১৪ সেঞ্চুরি ও ৫৬ ফিফটিও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজার ৮৮৪ বলের মুখোমুখি হয়েছেন তামিম। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি বল খেলেছেন আর কেবল মুশফিকুর রহিম, ২১ হাজার ৮৯৮টি।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি শূন্যও তামিমের। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৬ বার কাটা পড়েছেন তিনি রান পাওয়ার আগেই। ৩৩ বার শূন্যতে ফিরেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তামিম। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিটি করেছিলেন তিনি ওমানের বিপক্ষে ধর্মশালায়।
বাংলাদেশের হয়ে নন-কিপার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যাচ নেওয়ার সেঞ্চুরি করা তিন ফিল্ডারের একজন তামিম। ১০৬ টি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। সাকিব নিয়েছেন ১০৭ ক্যাচ। ১৬০ ক্যাচ নিয়ে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে আপাতত মাহমুদউল্লাহ। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড একসময় ছিল তামিমের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ২০৬ রানের সেই ইনিংসটি এখন টেস্টে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দেড়শ রানের ইনিংস আছে কেবল তিনটি। এর দুটিই এসেছে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়ায়োতে তিনি খেলেন ১৫৪ রানের ইনিংস। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই সিলেটে নিজের রেকর্ড ভেঙে করেন ১৫৮। পরের ম্যাচেই অবশ্য ১৭৬ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ডটি নিজের করে নেন লিটন কুমার দাস।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বার ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছে তামিম। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি এই স্বীকৃতি পেয়েছেন কেবল সাকিব আল হাসান (৪১ বার)। বাংলাদেশের হয়ে সিরিজ সেরার রেকর্ডেও তামিমের ওপরে কেবল সাকিব। ৭ বার ম্যান অব দা সিরিজ হয়েছেন তামিম। সাকিব শীর্ষে আছে ১৬ বার সিরিজ সেরা হয়ে। ৩৮৫ ম্যাচ নিয়ে শেষ হলো তামিমের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। বাংলাদেশের হয়ে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। এছাড়াও বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলেছেন তিনি আরও চারটি ম্যাচ। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩৭ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিকুর রহিম।


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ