ইউএনও’র অফিসে ঢুকে ড্রাইভারকে হত্যার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) গাড়ি চালক রুবেলকে মারতে দেশীয় অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে স্থানীয় যুবলীগকর্মী আহসান হাবিবসহ দুই সন্ত্রাসী। তাদের তাড়া খেয়ে আত্মরক্ষায় গাড়ি চালক রুবেল অফিসের দোতলায় উঠলে সন্ত্রাসীরা সিঁড়ি বেয়ে সেখানেও উঠে যায়।
গাড়ি চালক রুবেলকে মারতে না পারলেও অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে নির্বিঘ্নে ইউএনও অফিস থেকে ঘুরে যায় ওই দুই সন্ত্রাসী। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উপস্থিত লোকজন। প্রধান হামলাকারী আহসান হাবিব নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভিতরে এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় তারা অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে ধাওয়া করে চালককে মারতে না পেরে নির্বিঘ্নে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে বের হয়ে যায়।
আহসান হাবিব উপজেলার পুর্ব মাধনগর গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে এবং উপজেলা যুবলীগের উপ-কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে। তবে তার সহযোগীর নাম পরিচয় জানা যায়নি। ইউএনওর গাড়ি চালক রুবেল সদর উপজেলার উলুপুর ফুলবাগান এলাকার আবুল বাশারের ছেলে।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়ি চালক রুবেল জানান, তার বড় ভাই খোকন রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করেন। নলডাঙ্গার স্থানীয় যুবলীগ কর্মি আহসান হাবিব ঈদের আগে তার ভাইয়ের প্রাইভেট কারটি ভাড়া নিয়ে ৫ দিন রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করেন। কিন্তু ভাড়া না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন আহসান হাবিব।
এনিয়ে মঙ্গলবার সকালের দিকে তার ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা কাটাকাটি হয় হাবিবের। ভাড়া পরিশোধের কথা বললে আহসান হাবিব ছোট ভাই রুবেলকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে তার বড় ভাই খোকন তাকে অবহিত করে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউএনও অফিসের গেটের সামনে এসে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে রাজি না হলে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে ইউএনও অফিসের সামনে নিয়ে যায়।
এসময় ধারালো অস্ত্র বের করে তাকে মারতে গেলে আত্মরক্ষায় দৌড়ে পালিয়ে ইউএনও অফিসে ঢুকে পড়েন তিনি। এসময় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে তারাও মারার জন্য পিছু নেয় এবং দোতালা পর্যন্ত উঠে আসে। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি দেখে তারা চলে যায়। পরে বিষয়টি ইউএনও এবং পুলিশকে জানান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে, তাই কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন তার চালক রুবেলের ভাইয়ের সাথে আহসান হাবিবের বিরোধ রয়েছে। প্রাইভেট কারের ভাড়া নিয়ে মুলত তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে রুবেলের ওপর তারা অস্ত্রসহ হামলার চেষ্টা করে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আকবর হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানে নেমেছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নকুল জানান, উপজেলা যুবলীগের কমিটি গঠনের সময় তাদের মতামতের বাহিরে একটি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে তাকে সাংগঠনিক পদ দেয়া হয়েছিল বলে শুনেছেন। কিন্তু ওই কমিটির কোন অনুমোদন ছিল না। এব্যাপারে জানতে যুবলীগ নেতা আহসান হাবিবের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে সরকারী কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি চালককে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে উপজেলা কার্যালয়ে ঢুকে মারার চেষ্টা, এটা একটা নিরাপত্তার ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।


প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২৩ | সময়: ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ