পদত্যাগ করলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন

সানশাইন ডেস্ক: জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে এসে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সব সংসদ সদস্যের পদত্যাগ নিশ্চিত হলো।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও পদত্যাগকারী সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে আমাদের দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আমি বিদেশে থাকায় স্বাক্ষরকৃত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে স্পিকারের উপস্থিতিতে পদত্যাগপত্র স্বাক্ষরে জমা দিতে হয়। তাই সেদিন আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। গতকাল রাতেই দেশে ফিরেই আজকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশ এখন আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। জাতীয় সংসদ মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনও বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য নেই। এটি একদলীয় সংসদ। আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধিতে এ ধরনের কোনও সুযোগ নাই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, তারা যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাচ্ছে, এভাবে করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের পরিবর্তন আনতে হবে।’
৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে হারুন বলেন, ‘এটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা নাশকতা, জঙ্গি মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে বলেন, এটি আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। দেশে আইনের শাসনের লেশমাত্র নাই। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিণত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ এবং মুক্তমত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার সরকার নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধানকে বিলুপ্ত ও বাতিল করতে হবে।’
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকদের দাবির তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন প্রহসন ও উপহাসে পরিণত হয়েছে। সরকার কূটকৌশল ও অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছে বলে দাবি করেন হারুন। তিনি আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোটের শরিকদের সংসদ থেকে পদত্যাগের অনুরোধ জানান। বিএনপির মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন হারুন।
তিনি বলেন, স্পিকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার সুযোগ নেই। তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন, বলেছেন আপনারা সংসদ থেকে পদত্যাগ না করলেই পারতেন। সংসদে আপনাদের বক্তব্য বলতে পারতেন।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ও জিএম সিরাজ।
বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের মধ্যে আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় এবং হারুনুর রশিদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। তবে হারুনুর রশিদ ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন। তখন স্পিকার বলেছিলেন, সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বিদেশে থাকায় অনুপস্থিত রয়েছেন এবং সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় সংসদ সচিবালয়ে তার সই মিলিয়ে দেখবেন এবং কথা বলবেন। সব ঠিক থাকলে তার পদত্যাগপত্রও গৃহীত হবে। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র দেওয়ায় হারুনুর রশীদের আবেদন গ্রহণ হবে না, তাকে পরে এসে জমা দিতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সশরীরে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
১০ ডিসেম্বর সমাবেশে সংসদ সদস্যরা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। ৩৫০ আসনের সংসদে বিএনপির সাত সংসদ সদস্য হলেন, উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), জি এম সিরাজ (বগুড়া-৭), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪) ও রুমিন ফারহানা (সংরক্ষিত নারী আসন)।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির ছয় জন বিজয়ী হন, পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা।
সদস্যদের আসন শূন্য হওয়ার বিষয়ে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৭ (২)-এ বলা হয়েছে, কোনও সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন এবং স্পিকার কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকলে বা অন্য কোনও কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ডেপুটি স্পিকার যখন উক্ত পত্রপ্রাপ্ত হন, তখন থেকে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর