ভুটানের বিপক্ষে শঙ্কার দুলুনির চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: বেঙ্গালুরুর আকাশে মেঘ-রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। এই রোদ, তো পরক্ষণেই এক পশলা বৃষ্টি। ভুটান ম্যাচ সামনে রেখে বাংলাদেশ দলের অন্দরেও চলছে কিছুটা আশা-শঙ্কার লুকোচুরি। সেটা ২০১৬ সালের সেই হারের ভয়াবহ স্মৃতির কারণে।
যদিও প্রস্তুতিতে সে দুলুনির ছিঁটেফোঁটা দেখাও নেই। জামাল-জিকোরা প্রাণবন্ত। ইব্রাহিম-হৃদয়-জনিরা স্বস্তঃফূর্ত। বরাবরের মতো সতর্ক কেবল একজন, কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। মাঠে ঢুকেই তিনি ছকের বোর্ড নিয়ে হলেন মগ্ন। বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লক্ষ্য পূরণের মিশন যে তার শেষ হয়নি এখনও। কর্নাটক স্টেট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে মঙ্গলবার বিকেলে প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ দল। বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভুটানের মুখোমুখি হবে তারা। মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতে সেমি-ফাইনালে খেলার আশা টিকিয়ে রাখাকে এবার পূর্ণতা দেওয়ার অপেক্ষায় দল।
এই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে এবারের সাফের দুই অতিথি দলের একটি লেবানন (৬)। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের পয়েন্ট সমান ৩ করে। পয়েন্টের খাতা এখনও খুলতে পারেনি ভুটান। স্বাভাবিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে উন্মুখ হয়ে আছে তারা। ২০০৯ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের এই সর্বোচ্চ আসরে আর সেমি-ফাইনাল খেলা হয়নি বাংলাদেশের। টানা পাঁচ আসরে প্রথম পর্ব বা গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশা হয়েছে সঙ্গী। ভুটান ম্যাচ তাই বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। কাবরেরার কথায়, ‘এটি আরেকটি ফাইনাল।’
পরিসংখ্যানের পাতায় যদিও ২০১৬ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে হেরে যাওয়ার চোখ রাঙানি আছে, কিন্তু ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রাপ্তির হাসিই বেশি। সাফে ছয়বারের দেখায় ভুটানের কাছে কখনও হারেনি দল। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৩ বার মুখোমুখির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের জয় ১০টি, ড্র দুটি, হার মাত্র একটি। কিন্তু ওই এক হারই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের আঙিনায় অনুপস্থিত রেখেছিল দেড় বছর। ‘পঁচা-শামুক’ পা কাটার ভয় তাই আছেই। জামাল-তপুদের কণ্ঠে তা শোনা গেছে ঘুরেফিরে। যদিও প্রস্তুতির আবহ ছিল একেবারেই ভয়ডরহীন।
নিয়ম মেনে স্ট্রেচিং, রানি, পাসিং দিয়ে প্রস্তুতি শুরু। নির্ধারিত পনের মিনিটের পর কাবরেরা শুরু করলেন ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন। শুরু হলো বৃষ্টিও। ঘণ্টাখানেক টানা বৃষ্টিতেই চলল ট্রেনিং। মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ৪-১-৩-২ ফরমেশনেই হলো প্রস্তুতি। ভুটান ম্যাচের সেরা একাদশে একটি পরিবর্তন নিশ্চিত। রক্ষণে কাজী তারিক রায়হানের বদলে সুযোগ পেতে পারেন রহমত মিয়া বা মেহেদী হাসান মিঠু।
তারিকের মতো মালদ্বীপ ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রাকিব হোসেন। তবে তার খেলা নিয়ে যা একটু সংশয় ছিল তা কেটে গেছে। প্রস্তুতিতে গতিময় দেখা গেল রাকিবকে, নিজেদের মধ্যে খেলা ম্যাচে জালে বল জড়িয়ে এই ফরোয়ার্ড জানান দিলেন শতভাগ প্রস্তুত তিনিও।
এক ফাঁকে দলকে মাঝমাঠে ডেকে ছোট মিটিং সেরে নিলেন কাবরেরা। এরপর শুরু করলেন শুটিং অনুশীলন। পয়েন্ট টেবিলের যে অবস্থা তাতে চার দলেরই সুযোগ আছে সেমি-ফাইনাল খেলার। ভুটানের বিপক্ষে জয়েও যথেষ্ঠ হবে না বাংলাদেশের, যদি লেবাননের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতে যায় মালদ্বীপ। সেক্ষেত্রে এই তিন দলের পয়েন্ট হবে ৬ করে। আবার মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ হারলে তাদের মতো ভুটানের পয়েন্টও হবে ৩ করে। তখন গোল পার্থক্য হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। গোলের অনুশীলন তাই হলো আঁটঘাঁট বেঁধে।
শুরুতেই জামালের কর্নারে দুর্দান্ত ডাইভিং হেডে জাল খুঁজে নিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। গত দুই ম্যাচে রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণের সুর বেঁধে দিতে ছুটেছেন তিনি। মালদ্বীপ ম্যাচে শেখ মোরসালিনের গোলের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন এই বিশ্বনাথ। কিছুক্ষণ শুটিং অনুশীলনের পর ফের গোলাকার হয়ে মিটিং। এরপর ‘বাংলাদেশ’ চিৎকারে মুখরিত হলো চারধার।
প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন কাবরেরা। আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানিয়ে গেলেন ভুটান দেয়াল ভেদ করার আশাবাদ। প্রতিপক্ষের কৌশলের চেয়ে জোর দিলেন নিজেদের পারফরম্যান্স মেলে ধরার দিকে। “দলের সবাই দারুণ অনুপ্রাণিত এবং সেমি-ফাইনালের লক্ষ্য অর্জন করার জন্য দলের মধ্যে বিরাজ করছে খুবই ইতিবাচক আবহ। পরিকল্পনা নিয়ে মনোযোগী আছে সবাই। আমি মনে করি, এটা মালদ্বীপের বিপক্ষের ম্যাচের মতোই হবে এবং আমাদের আবারও ফল পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শক্তিশালী ভুটানের বিপক্ষে আমাদেরকে নিজেদের ছকে মনোযোগী থাকতে হবে।”
“ভুটানের টানা দ্বিতীয় হার আমাদের জন্য সুবিধার নয়। আমাদের সুবিধা হচ্ছে, প্রথম ম্যাচের ফল বাদে আমাদের ফল (মালদ্বীপ ম্যাচের জয়) এবং এটাই আমাদের মানসিকতা হওয়া উচিত। প্রথম ম্যাচ নিয়ে আমরা পড়ে থাকব না। মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতে আমরা ভাগ্যবান এবং ওই ম্যাচের ফল আমাদেরকে নিজেদের প্রতি নির্ভর করার এবং ফল পাওয়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।”
গত সাফেও দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের দেয়াল টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু অতীতে দৃষ্টি দিতে চান না কাবরেরা। এই স্প্যানিশ কোচ থাকতে চান বর্তমানে, আবার পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য পূরণের উচ্ছ্বাসে ভাসতে। “২০২১ সালের ওই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়াদের অনেকে আছে এই দলে। পরিস্থিতিও তেমনই। গত সাফেও দল লক্ষ্য অর্জনের খুব কাছাকাছি ছিল এবং পারফরম্যান্স সেমি-ফাইনালে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো ছিল, কিন্তু হয়নি। এখন আমাদের সামনে আবার সেই সুযোগ এবং সবকিছু নির্ভর করছে আমাদের ওপর।”
“অভিজ্ঞ এবং তরুণদের মিশেলে আমাদের ভালো একটা দল আছে, যারা ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারে। এমনকি যারা বদলি নামবে, তারাও প্রভাব রাখতে সক্ষম। আবারও বলতে চাইছি, ২০২১ সালে বা অতীতে যা হয়েছে, তার চেয়ে এবার সবকিছু নির্ভর করছে আমাদের নিজেদের পারফরম্যান্সের ওপর।”


প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ | সময়: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ