সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে বিপুল ভোটে নৌকার জয় : তৃতীয়বার সিটি মেয়র হলেন লিটন

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একচেটিয়া ভোট পেয়ে তৃতূীয়বারের মত মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ( নৌকা)।
জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত এই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীককে বেছে নিলেন রাজশাহী নগরবাসী। রাজশাহীতে এবারও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বড় ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করলো।
বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোট বর্জনকারী ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম ফারুকী হাতপাখায় পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট। জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার গোলাপ ফুল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৭১৩ ভোট। আর জাতীয় পার্টির সাইপুল ইসলাম স্বপন পেয়েছেন মাত্র ১০২৭২ ভোট। এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
এদিকে লিটনের জয়ের খবর সন্ধ্যা থেকেই জানান দিচ্ছিলো। ভোট গনণার শুরু থেকেই কেন্দ্র থেকে আসা ভোটের তথ্যে এগিয়ে থাকায় উদ্বেলিত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ ও লিটন সমর্থকরা। রাতে বেসরকারিভাবে লিটনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে নগরজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। পাড়া-মহল্লা থেকে খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এবার তৃতীয়বারের মতো নগর পিতা হলেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্র। তিনি ২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী হয়ে প্রথমবার জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি ৮৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হয়েই বহুমাত্রিক উন্নয়নে বদলে দেন রাজশাহী নগরীকে। এজন্য রাজশাহীর অন্যতম সফল মেয়র বলা হয় তাকে। রাজশাহী উন্নয়নের রূপকার এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী নগরীর চিত্রপট বদলে দিয়েছেন উন্নয়নের মাধ্যমে। পরিচ্ছন্নতায় বিশে^র সেরা নগরের খ্যাতি পায় রাজশাহী মহানগর।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জের এক বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামান। তারা মাতার নাম জাহানারাজামান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ এবং ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। বংশগতভাবে লিটনের পরিবার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা এএইচএম কামারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লিটনের দাদা আবদুল হামিদ মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং দীর্ঘদিন রাজশাহী অঞ্চলের মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান আইন সভার সদস্য (এমএলএ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লিটনের বড় মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সহধর্মীনি শাহিন আকতার রেনী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯৭৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য তিনি ভারতে যান। সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৯ সালে তিনি তার প্রথম স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে দ্বিতীয় বারের মত স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। পেশাগত জীবন শুরু হয় আইনজীবী হিসেবে। ১৯৮৫ সালে তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে সংসদীয় আসন রাজশাহী-২ (পবা-বোয়ালিয়া) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।
বুধবার রাতে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। মোড়ে মোড়ে বিজয় মিছিল বের করে নৌকার সমর্থকরা। নগরজুড়ে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি যে অঙ্গীকার করেছি তা জীবন দিয়ে হলেও বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। সিটি করপোরেশন সবার। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করবো। আমাদের সবার চেষ্টা রাজশাহীর উন্নয়ন করা। আমরা সেদিকেই মন দিবো।


প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ | সময়: ৪:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ