সর্বশেষ সংবাদ :

বদলে গেছে রাজশাহী, বদলে গেছে দিন…

মামুন রশিদ : ‘বদলে গেছে রাজশাহী-বদলে গেছে দিন/ উন্নয়নে ভাসতে আবার নৌকায় ভাট দিন’। ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান-এবার হবে কর্মস্থান’-এমন গানের আওয়াজে এখন মুখরিত হচ্ছে রাজশাহী নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে অলিগলি। ঘড়ির কাটায় বেলা ঠিক ২ টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সুরেলা গানের আওয়াজে উদ্বেলিত এখন রাজশাহী নগরীর সর্বত্র। এ আওয়াজ চলছে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন নিয়ে ভোটের উৎসবে এখন মাতাল বরেন্দ্র খ্যাত রাজশাহী নগরী। আগামী ২১ জুন নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম রাজশাহীর ভোটের মাঠ। প্রার্থী ও ভোটারের পাশাপাশি রাজশাহী নগরবাসী এখন উপভোগ করছেন দারুন এ ভোট উৎসব।
ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর থেকেই ভোটের উৎসব শুরু হয় এ নগরে। তবে গত ২ জুন থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু পর থেকে আলাদা মাত্রা পেয়েছে নগরবাসী। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের বেসামালাল মাইকের আওয়াজ, আর পোষ্টার, ব্যানার লিফলেটে ঢাকা পড়েছে নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি সর্বত্র। রাজশাহী নগর ছাড়িয়ে এ ভোটের রেস ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা থেকে উপজেলা ও গ্রাম পর্যন্ত। দুরের মানুষও এখন ভোটের উৎসবে সামিল হচ্ছেন। তারা উঠেছেন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। দলীয় প্রার্থী হয়ে নামছেন ভোটের প্রচারেও। সবার টার্গেট এখন ভোটের মাঠে। গানে গানে স্লোগান উঠছে দুপুর পেরুলেই। প্রার্থীদের পক্ষে এ অঞ্চলের জনপ্রীয় গম্ভীরার দলও চোষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। সব মিলিয়ে সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে রাজশাহী নগরের সর্বত্র।
নগরজুড়ে গম্ভীরার সুরের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ইশতেহার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নগরজুড়ে। পাশাপাশি শিল্পীদের সুরে মাইকের বাজানো হচ্ছে প্রার্থীদের প্রতীক নিয়ে গান। মাইকে মেয়র প্রার্থী লিটনের গানে এবার পেয়েছে আলাদা মাত্রা। মেয়র পদে এখন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বলতে লিটনই শুধু সক্রিয় রয়েছে। এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পাটি, জাকের পাটি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী। যদিও গত ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে নির্বাচনের পর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রাসিক নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। তবে ভোটের উৎসবে ছেদ পড়েনি। শুরু তেকে গানে গানে, পোস্টার লিফলেটে আর ভাচ্যুায়াল প্রচারে তুঙ্গে রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রচার।
আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে তাই উদ্দেলিত নগরবাসী। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুরাও এখন ভোটের মাঠে নেমেছে পছন্দের প্রার্থীদের হয়ে। গত ২ জুন থেকে শুরু হয়েছে ভোটের উৎসব। প্রতিক বরাদ্দের দিন থেকেই নগরীতে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। ভোটার টানতে নগরীতে পোস্টার সাঁটিয়ে, নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মানুষের দুয়ারে গিয়ে ভোট চেয়ে, মাইকিং করে গণসংযোগ করতে ব্যস্ত তারা। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রচার-প্রচারণার মাত্রা যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আসন্ন নির্বাচন যেন পদ্মাপাড়ের নগরী রাজশাহীতে উৎসবে পরিণত হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবার রাজশাহী সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে শুরু থেকেই এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এছাড়া সাধারণ ৩০ টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ১১২ জন এবং সংরক্ষিত ১০ টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন আরো ৪৬ জন। সবমিলিয়ে রাজশাহী সিটি ভোটে এবার অংশ নিয়েছেন ১৬২ জন। প্রতিদিন দুপুর থেকে প্রতি প্রার্থীর মাইকিং শুরু হচ্ছে একযোগে। অন্তত নগরজুড়ে একসঙ্গে হাজার মাইকের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে নগরীর অলিগলি থেকে সর্বত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরেন্দ্র নগরী রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক, মোড়, অলি-গলি নির্বাচনী ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। অটোরিক্সায় মাইক বেঁধে নগর ঘুরে চলছে প্রচারণা। পাশাপাশি প্রার্থীরা ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’ করছেন। প্রতিটি বাসা-বাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নগর উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি-ইশতেহার দিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চাইছেন। কেউ কেউবা আবার ভোট চাওয়ার অভিনব পন্থা বের করেছেন। জনপ্রিয় বাংলা গানের লিরিক বদলে তাতে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার বসিয়ে গানের তালে তালে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ভোট চাইছেন। রাজশাহীর অসহনীয় গরমও যেন প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।
এদিকে রাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থন যোগাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকেও আসছেন দলীয় নেতারা। নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মধ্যেও বেশ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এখন নগরের প্রতিটি চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয় আসন্ন রাসিক নির্বাচন। চায়ের কাপেও নৌকার আলাপই বেশী হচ্ছে।-
ভোটারা হিসাব কষছেন উন্নয়নের পক্ষে থাকার। সে ক্ষেত্রে খায়রুজ্জামান লিটনের গত ৫ বছরের উন্নয়ন চিত্র নিয়ে ভাবছেন। তার বলছেন লিটন উন্নয়নে পরীক্ষিত। তাই তাকে ভোট দিলে রাজশাহী নগরী ও নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন হবে।
রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকার বাসিন্দা আরিফুল হক বলেন, ভোট নিয়ে আমরা সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবাই আমাদের কাছে এসে ভোট চাইছেন, ওয়াদা করছেন। আমাদের এলাকার যারা উন্নতি করবে, আমরা তাদেরই ভোট দেব। এক্ষেত্র লিটন ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই এবারো ভোট নৌকায় দেবেন বলে জানান তিনি। নগরীর তরুণ বোটাররা বলছেন আবারে নির্বাচনে রাজশাহীতে নৌকার প্রার্থীর কোনো বিকল্প নেই। তাই বোট নস্ট না করে তারা নৌকা প্রতীক বেছে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এবার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৪ প্রার্থী। এদের মধ্যে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), পাশাপাশি প্রচারণা বাড়িয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। আর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভোটের উৎসব তৈরি বরেছেন প্রায় দেড় শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী।


প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ