কৃষকের সবুজ স্বপ্ন এবার পটলক্ষেত

নুরুজ্জামান, বাঘা: বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলের চাষী আবু বকর। তিনি চার বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছেন। পটলের উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় তার মুখে প্রান চঞ্চল হাসি। অনেকটা উচ্ছসিত কণ্ঠে তিনি বললেন, এবার পটল বিক্রি করে তিনি ভালো টাকা আয় করবেন।
শুধু আবু বকর নয়, বাঘার চরাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক সহ সমতল এলাকার আড়ানী এবং বাউসা ইউনিয়নে এবার পটল চাষ বিপ্লব ঘটেছে। কৃষকরা আশাবাদী, যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে তারা আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হবেন।
সরেজমিন উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর, আড়ানী এবং বাউসা ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে লক্ষ করা গেছে অসংখ্য পটল ক্ষেত। কোন জায়গায় বাঁসের চালা তুলে পটল চাষ হচ্ছে। আবার কোন-কোন জায়গায় ফাঁকা জমির উপর খড় বিছিয়ে তার উপর পটল চাষ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু চাষী পটল তুলায় ব্যস্ত আবার কেউ-কেউ পরিচর্যায়।
এক কথায় কৃষকরা যেন পটলের সাথে মিশে গেছে আবার পটলগুলো যেন ছোট বাচ্চার মত আদর নিতে বাতাসে দোল খাচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এবার ভাল দাম পাওয়ায় পটল তাদের ভাগ্য বদলাতে সহায়ক হচ্ছে। আর তাই পরম মমতায় তারা পটল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
পটল উঠানোর কাজে ব্যস্ত উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক ফজলু দেওয়ান বললেন, এই যে দেখছেন পটল উঠাচ্ছি। পটলগুলো জোরে ফেলে দিলে পটলের গায়ে দাগ বসবে। বিক্রিতে কম টাকা আসবে।
এ কারণে খুবই সতর্কতার সাথে পটল উঠাচ্ছি। তিনি তার দুই বিঘা জমি থেকে প্রতি সপ্তায় ১০ মন পটল উঠান এবং প্রতিমন পটল ৯’শ টাকা মন দরে বিক্রী করেন বলে জানান।
এদিকে পটল ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত উপজেলার আড়ানী গ্রামের কৃষক সুজন আলী বললেন, বর্তমানে পটল আমাদের ভরসা। তাই ক্ষেতের পরিচর্যা করছি। তিনি বলেন, গতকাল পটল তুলেছি, আমি প্রতি দু’দিন পর-পর পটল তুলে থাকি। এখানে পাইকারি বাজার ৯ শ টাকা মন। এ বছর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তিনি পটল বিক্রী করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা আয় করবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
চরাঞ্চলের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, আমাদের চরাঞ্চলকে সবজি ভান্ডার বলা হয়। এখানে সকল প্রকার সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে এ বছর অন্যান্য সবজির চেয়ে পটলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা আনান্দের সাথে পটল উঠাচ্ছে এবং এখানকার পটল স্থানীয় চাহিদা পুরণের পাশা-পাশি নাটোর, খুলনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট এমনকি রাজধানী ঢাকাতে আমদানি করা হচ্ছে।
বাঘার পটল চাষ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পটল গ্রীষ্মকালীন সবজি। বাংলাদেশের সব এলাকায় পটলের চাষ হয় না। বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া ও যশোর জেলায় ব্যাপক ভাবে পটলের চাষ করা হয়। এ দিক থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা অন্যতম।
এ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের জমিগুলো সকল প্রকার সবজি চাষে বেশ উপযুক্ত। তবে স্থানীয় কৃষকরা অন্যান্য সবজির চেয়ে গত বছর পটলের উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার অধিকাংশ কৃষক পটল চাষ করেছেন।
তার মতে, এ বছর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে পটল চাষ হয়েছে। তিনি সকল চাষাবাদে সরেজমিন ক্ষেত পরিদর্শন সহ কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান।


প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৩ | সময়: ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর