মরা গাছের ওয়ার্ক অর্ডারে সাবাড় হচ্ছে তাজা গাছ

ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদী-দাশুড়িয়া মহাসড়কের দুই পাশে থাকা অসংখ্য বড় বড় তাজা গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। মহা-সড়কের দুই পাশের বড় ও মাঝারি আকারের ৫৯ টি রেন্টি কড়ই গাছ বনকর্মকর্তাদের দিয়ে মুল্য নির্ধারণ না করেই পানির দরে বিক্রয়ও করা হয়েছে। আর গাছ কাটার ওয়ার্ক অর্ডারে মরা ও শুকনো গাছ কাটার অনুমতি থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন সম্পুর্ণ তাজা ও সতেজ গাছ কেটে সাবাড় করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে কেটে ফেলা গাছের টুকরোগুলো জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশকে খবর দিয়েছেন ঈশ্বরদী বন কর্মকর্তা। তবে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা মরা ও শুকনো রেন্টি কড়ই গাছ কাটার নামে তাজা গাছ ও সতেজ গাছ কাটার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক ও জনপথ পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ ও ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ।
সড়ক ও জনপথ পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী সুত্র জানায়, গত বছর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের দুই পাশে বড় ও মাঝারি সাইজের অর্ধ শতাধিক শুকনা গাছের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে গাছগুলো সার্ভে করা হয়। এতে প্রাথমিক ভাবে বড় ও মাঝারি আকারের ৫৯ টি গাছ কাটার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।
এতে কুষ্টিয়ার মেসার্স বকুল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৭১ হাজার টাকা দর প্রদানের মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার পায়। ঠিকাদারের লোকজন গত সোমবার থেকে চিহ্নিত করে দেওয়া মরা ও শুকনো গাছগুলো কাটা শুরু করে।
স্থানীয়রা জানান, ৭-৮ জনের একটি দল সোমবার সকাল থেকে মহাসড়কের মরা ও শুকনো গাছগুলোর পাশাপাশি কিছু তাজা ও সতেজ গাছও কাটতে ছিলো। বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী উপজেলা বন কর্মকর্তাকে জানানো হয়। তিনি ঘটনাস্থলে এসে তাজা ও সতেজ কাটা বন্ধ করে দেন।
একই সঙ্গে কেটে ফেলা তাজা ও সতেজ গাছের টুকরোগুলো জব্দ করে স্থানীয় একটি ‘স’ মিলে রাখেন। গাছ কাটার সর্দার কুষ্টিয়ার জাহারুল ইসলাম জানান, ঠিকাদারের লোকজন আমাদের যে গাছগুলো কাটতে বলছেন আমরা সেইগাছগুলো কাটছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা বনকর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, গাছগুলো পানির দরে আরবরি কালর্চারাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজছে বিক্রয় করেছে। গাছগুলো বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোন পরামর্শ না করেই বড় ও মাঝারি আকারের ৫৯ টি গাছ মাত্র ৭১ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে। অথচ গাছগুলোর কমপক্ষে বাজার মুল্য হবে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা। তাজা ও সতেজ গাছ কাটার খবর পেয়ে কেটে ফেলা গাছের টুকরোগুলো জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
সওজ, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ জানান, ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের মরা ও শুকনো গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য রাজশাহী আরবরি কালর্চারাল থেকে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রয় করেছেন। তবে ঠিকাদারের লোকজন মরা ও শুকনো গাছের পরিবর্তে তাজাগাছ কেটেছে বলে শুনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ জানান, মহাসড়কের মরা ও শুকনো গাছের পরিবর্তে তাজা ও সতেজ গাছ কেটে ফেলার খবরটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গাছ কাটার ঠিকাদার কুষ্টিয়ার বকুল এন্টারপ্রাইজের মালিক বকুল বলেন, আমার লোজনকে মরা ও শুকনো গাছ কাটতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কেন তাজা ও সতেজ গাছ কেটেছে তা আমার জানা নেই। তাজা গাছ কাটার বিষয়টি দুঃখজনক। তবে আর যেনো তাজা গাছ কাটা না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখা হবে।


প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৩ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ