সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: ক্যারিয়ারের শুরুতে যখন বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছিলেন লিটন দাস, তখন কাঁধে ভরসার একটি হাত পেয়েছিলেন তিনি। হতাশায় ঘেরা সেই সময়ে তাকে আশা ও সাহস জুগিয়েছেন বাংলাদেশের তখনকার কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে। এখন সেই লিটন যখন হয়ে উঠেছেন দলের বড় ভরসার জায়গা, দেশকে নেতৃত্ব দিতে চলেছেন টেস্ট ক্রিকেটে, তাতে গর্বের ছবি আঁকছেন হাথুরুসিংহেও।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট রাঙিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের রেকর্ড গড়ে যখন ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক লিটনের, হাথুরুসিংহে তখন ছিলেন বাংলাদেশের কোচ। টেস্ট ক্রিকেটে শুরুটা ভালো করলেও পরে কোনো সংস্করণেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি লিটন। তিন সংস্করণেই ব্যর্থ হয়েছেন একের পর এক ম্যাচে। সমালোচনার তিরে তখন বিদ্ধ হতে হয়েছে তাকে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে অধিনায়কের পাশাপাশি কোচকেও।
বাংলাদেশের দায়িত্বে হাথুরুসিংহের সেই অধ্যায় যখন শেষ হয়েছে, লিটনও তখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছেন। পরে তিনি আস্তে আস্তে খুঁজে পান নিজেকে। পায়ের নিচে জমিন শক্ত করে নতুনভাবে মেলে ধরতে শুরু করেন নিজেকে। হাথুরুসিংহে যখন এই দফায় কোচ হয়ে এলেন, লিটন তখন সব সংস্করণ মিলিয়ে দলের সেরা ব্যাটসম্যান।
নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোটে টেস্ট নেতৃত্বে লিটনের অভিষেকও হয়ে যাচ্ছে সেই হাথুরুসিংহের কোচিংয়েই। অধিনায়ক হিসেবে লিটনের প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে পেছন ফিরে তাকিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন হাথুরুসিংহে। “ওর অনেক কম বয়সেই আমরা ওকে বাংলাদেশের জন্য দারুণ সম্ভাবনাময় হিসেবে নজরে রেখেছিলাম। এজন্যই আমরা ওর ওপর আস্থা রেখেছিলাম। তখন তার পাশে থাকার ফল মিলছে এখন। শুধু সে-ই নয়, আরও কয়েকজনেরও পাশে ছিলাম আমরা। মনে আছে, ২০১৭ সালে (২০১৬-১৭) নিউ জিল্যান্ড সফরে আমরা দুজন বাড়তি ক্রিকেটার নিয়ে গিয়েছিলাম, ইবাদত ও শান্ত। সেসবের ফলও মিলছে। এখন তারা দলে শীর্ষ ভূমিকা রাখছে।”
“এভাবেই ক্রিকেটারদের গড়ে তুলতে হয়। কাউকে দলে নেওয়ার পর পারফর্ম না করলে ২-৩ ম্যাচ পরই বাদ দেওয়া ভালো কিছু নয়। প্রতিভাবান কাউকে পেলে তাকে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই কেবল সম্ভাবনাগুলো ফলপ্রসূ হবে।” ২০১৬-১৭ মৌসুমের নিউ জিল্যান্ড সফরে মূল স্কোয়াডের বাইরে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। দুজনই তখন ছিলেন একদম আনকোরা। তাদের নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল, দলের সঙ্গে রেখে আস্তে আস্তে গড়ে তোলা। সেবারই অবশ্য নাটকীয়ভাবে টেস্ট অভিষেক হয়ে যায় শান্তর। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, ইমরুল কায়েস একসঙ্গে চোটে পড়ায় জরুরি প্রয়োজনে ক্রাইস্টচার্চে খেলানো হয় তাকে।
সেই শান্ত, ইবাদত, লিটনরা এখন দলের অবিচ্ছেদ্দ অংশ। দলের নেতাদের একজন লিটন। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা লিটনের হয়ে গেছে। ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে টেস্টের নেতৃত্ব অবশ্যই আলাদা। এখানে পরীক্ষাটা আরও কঠিন। লিটন শুধু দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানই নন, কিপারও। ত্রিমুখী এই দায়িত্ব তার জন্য চাপ হয়েও উঠতে পারে।
সেই চাপ সরানোর টোটকাও অবশ্য দিয়ে রেখেছেন হাথুরুসিংহে। “নেতৃত্ব মানে তার যা কাজ, মাঠে গিয়ে সেটিই করা। ব্যাটিংয়ের সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই। অধিনায়কদের আমি সবসময়ই বলি, ‘যখন ব্যাটিং করছো, তখন তুমি দলে সেরা বাটসম্যান। আর যখন অন্য ১০ জনের সঙ্গে তুমি মাঠে নামছো, তখন তুমি অধিনায়ক।’ এটাই আর কী, এই দুটি ভূমিকাকে আলাদা করে ভাবতে হবে।”