প্রক্সিতে ধরা পরেও ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, সমালোচনার মুখে ফল বাতিল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় শিফটে প্রথম হয়েছেন তানভীর আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি ৯২ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে ওই শিফটে প্রথম হয়েছেন। তবে তিনি পরীক্ষা দেননি তার হয়ে প্রক্সি দিতে আটক হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী বায়েজিদ খান। প্রক্সিতে ধরা পরেও রেজাল্ট আসায় তীব্র সমালোচনার মুখে পরতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। পরে তার ফল বাতিল করা হয়।

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলার কারণে এমনটি ঘটছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তারা বলছেন, এত বড় একটা ঘটনার পরেও কেন ফল প্রকাশ হলো এটি তাদের বোধগম্য নয়। নিয়ম অনুযায়ী ওই উত্তরপত্রগুলো পৃথক করার কথা থাকলেও তারা সেটি করেননি। ওই কক্ষের পরীক্ষক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতি ও সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, ‘এ’ ইউনিটের ৩৯৫৩৪ রোল নম্বরধারী তানভীর আহমেদ দ্বিতীয় শিফটে প্রথম হয়েছেন। এর আগে পরীক্ষার দিন জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- এই রোল নম্বরধারী তানভীরের হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন বায়েজিদ খান।

 

আরও দেখা যায়, ওইদিন ৬২৮২৮ রোল নম্বরধারী ইশরাত জাহানের হয়ে প্রক্সি দেন জান্নাতুল মেহজাবিন। নিয়ম অনুযায়ী প্রক্সি বা জালয়াতি ধরা পরার পর তার উত্তরপত্র বাতিল হওয়ার কথা, কিš‘ প্রকাশিত ফলে দেখা যায় তিনিও পাস করেছেন। তিনি তৃতীয় শিফটে ৪৬ দশমিক ৯০ পেয়ে ৬ হাজার ৯২১ তম অবস্থানে রয়েছেন। পরে তার ফলও বাতিল করা হয়।

 

তানভীর আহমেদের প্রথম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, তার ফল বাতিল করা হয়েছে। তার ওএমআর শিটে কোনো সুপারিশ ছিল না। ফ্রেশ খাতা হিসেবে এসেছে, সেটি মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।

 

তিনি আরো বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন কাউকে সন্দেহ হলে তার ওএমআর শিট আলাদা রাখতে হয়। বায়েজিদ খানকে (তানভীরের হয়ে পরীক্ষাদাতা) পরীক্ষা চলাকালীন সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়, সে প্রক্সি দিয়েছে প্রমাণ পেয়ে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এগুলোর পরও তাঁর ওএমআর আলাদা হয়নি। প্রক্টর দপ্তর থেকেও আমাদেরকে জানানো হয়নি এই রোল নম্বরধারীর হয়ে প্রক্সি দেওয়ায় একজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ফ্রেশ ওএমআর এসেছে, মূল্যায়ন করে ফল ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই বিশ^বিদ্যালয়ের সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের ৩০১ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দেন বায়েজিদ খান। ওই দিনে সেখানে পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহা. মনিরুল হক, ক্রোপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক শাহানা কায়েস এবং ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অ্যধাপক শেফালী আক্তার।

 

এ বিষয়ে পরীক্ষা পরীদর্শক অধ্যাপক মনিরুল হক বলেন, ওই মুহূর্তে আসলে কী করা উচিৎ ছিল সেটি আমরা বুঝতে পারিনি। ফলে এমনটি হয়েছে।

 

এমন ঘটনায় পরীক্ষকের দায় দেখছে ভর্তি উপকমিটি। তারা বলছেন, তানভীর আহমেদের হয়ে প্রক্সি দিতে এসে আটক হয়েছিলেন বায়েজিদ। এরপরও ওই ওএমআর বাতিল না হওয়ায় পরীক্ষক এর দায় এড়াতে পারেন না। এজন্য দায়িত্ব অবহেলার কারণে পরীক্ষককে তলব করা হবে।

 

এদিকে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক বিষয়টিতে প্রক্টর দপ্তরের গাফিলতির কথা বললেও এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক।

 

সার্বিক বিষয়ে ভর্তি উপকমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, তাঁর ফল বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে আটক হওয়ার পরই ওই কক্ষের পরীক্ষক তাঁর খাতা বাতিলের সুপারিশ করবেন এটাই স্বাভাবিক। ওএমআরে কোনো সুপারিশ নেই। এটেনডেন্সে সুপারিশ আছে কি-না জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এখানে পরীক্ষকের দায় অবশ্যই রয়েছে। পরীক্ষক দায়িত্ব অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না। তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

 

 

সানশাইন/তৈয়ব


প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২ | সময়: ৯:০৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর