র‌্যাব হেফাজতে নিহত জেসমিন ও যুগ্মসচিব এনামুলের আর্থিক লেনদেনের প্রমান এখন তদন্ত কমিটির হাতে

নওগাঁ প্রতিনিধি:

হেফাজতে নওগাঁর চন্ডিপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক সরকারী কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় তার ছেলে, ভাই ও মামা, বাড়িওয়ালা এবং দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল। আজ সোমবার বিকেল ৩টা থেকে তদন্ত দলের সদস্যরা তাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তদন্ত দলের সদস্যরা। তদন্ত দলের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সার্কিট হাউস চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সুলতানা জেসমিনের মামা নাজমুল হক ও তার ভাই সুলতান মাহমুদ। তদন্ত দলের আমন্ত্রনে আসা অন্যদের তখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। তদন্ত দলের সদস্যদের মধ্যে নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আবু শামীম আজাদ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইমতিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল করিম, সিভিল সার্জন আবু হেনা মো. রায়হানুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান সার্কিট হাউসে ঢুকতে দেখা যায়। রাত ৮টায় এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল।

 

 

 

 

নিহত জেসমিনের মামা নাজমুল হক বলেন, গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে জেসমিনকে র‌্যাব সদস্যরা আটকের পর নওগাঁ হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দাফন কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন কি কি ঘটেছে তার বর্ণনা আমাদের কাছ থেকে শুনেছেন। এছাড়া জেসমিনের বাসা থেকে জেসমিন ও মামলার বাদী এনামুলের মধ্যকার বিভিন্ন অংকের টাকা লেনদেনের কাগজপত্র আমরা পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে আশা করছি তারা নিরপেক্ষ তদন্ত করবেন এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবেন। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে ন্যায়বিচার পাব বলে আমরা আশাবাদী। জেসমিনের ভাই সুলতান মাহমুদ বলেন, আটকের আগে আমার বোন সুস্থ্য ছিল। র‌্যাব আটকের পর অসুস্থ্য হন এবং তাদের হেফাজতে চিকিৎসা চলা অবস্থায় মারা যান। এজন্য আমি র‌্যাবকে দায়ী করছি। আশা করি, প্রকৃত দোষী চিহ্নিত হবে।

 

 

 

উল্লেখ্য, হাইকোর্টের এক আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২২ মে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খানকে। কমিটি সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, নওগাঁর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং নওগাঁর পুলিশ সুপারের মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। র‌্যাব-৫-এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে জেসমিনকে আটক করে।

 

 

 

 

 

স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে যায় র‌্যাব। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল আমিন নামের এক ব্যক্তি তার (এনামুল) ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন  দেখিচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারনা করে টাকা হাতিয়েনি ছিলেন। আটকের পরের দিন ২৪ মার্চ সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুগ্মসচিব এনামুল হকের করা একটি মামলার কথা জানা যায়, যেটি রেকর্ডের সময় ২৩ মার্চ বিকেল। জেসমিন ও তার কথিত সহযোগী আল আমিনকে এতে আসামি করা হয়। আল আমিনকে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তিনি একজন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩ | সময়: ১১:৪৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine