রাজশাহীতে জমি জালিয়াত চক্রের তৎপরতা : জেলে বসেই কলকাঠি নাড়াচ্ছে ফারজানা জামিনে এসে ফের তৎপর চক্রের সদস্য

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে জমি প্রতারক চক্রের মুল হোতারা একাধিক অভিযোগে কারাগারে গেলেও থেকে নেই তাদের অপতৎপরতা। চক্রের একজন জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও সক্রিয় হয়েছে। এ চক্রের একজন রাসিকের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি জেলে থেকে আবারো নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়ন দাখিল করেছেন। তার অপর দুই সহযোগী হলো তার স্বামী রেজাউল ইসলাম ও নগরীর উপশহর এলাকার মৃত আব্দুল হাফিজ খানের ছেলে তোফায়েল। বর্তমানে ফারজানা দম্পতি কারাগারে থাকলেও জমিনে বেরিয়ে এসেছে তোফায়েল। জামিনে বোরিয়েই আবারো তৎপরাত শুরু করেছেন তিনি।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক ওই নারী কাউন্সিলর জমি প্রতারক চক্রের মুলহোতা। তাদের বিরুদ্ধে একই জমি বিভিন্ন জনের কাছে বায়নার নামে প্রতারনা, চেক বাণিজ্য, ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা, এমনকি আদালতেও প্রতারণা আশ্রয় নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি অপপ্রচারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিচ্ছেন জমি প্রচারক চক্রের অন্যতম সদস্য তোফায়েল। প্রতারক চক্র বিভিন্ন জনের নিকট একই জমি বায়নামা মূলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে বায়নাকারী ভুক্তভোগীদের বাগে আনতে ফারজানা চক্র মিথ্যাচার ও নানা অপপ্রচার শুরু করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, অভিনব কায়দায় প্রতারণা, জমি দখল, একই জমি বিভিন্ন জনের নিকট বায়না, বায়নার পরে তালবাহানা, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎসহ নানা হয়রানি’ ছিলো চক্রটি’র মুল পেশা।
জানা গেছে, এ বছর আরএমপি’র দুটি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাজপাড়া থানা পুলিশ চক্রের তিনজনকে আটক করে। তিন প্রতারকের একজন তোফায়েল অস্থায়ী জামিনে বের হয়ে নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীলা জানান, রাজশাহী জেলার পবা থানাধীন আলীগঞ্জ মৌজায় জেএল নং-আর.এস-৬২, খতিয়ান নং- সি.এস-৬৯, এস.এ-৮২, আর.এস-২২৪, প্রস্তাবিত-৭১০৪, দাগ নং-সাবেক-৪৫৪, আর.এস- ৭৬০, রকম-ভিটা, পরিমাণ-০.৭৮০০ একর কাত-০.১৬২৯ একর জমি আছে মোছা: ফারজানা হকের।
ফারজানা হক গত বছরের ২৩ জুন .০৩৩০ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৬৯৮ নং দলিল মূলে নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশার সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ১০ লাখ টাকা নেয়। প্রথম বায়না রেজিস্ট্রির দুই সপ্তাহ পরেই একই বছরের ৭ জুলাই ০.০৭৭৫ একর জমির ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বায়না করে পবার আলীগঞ্জ এলকার আব্দুল গাফ্ফারের কাছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়। দ্বিতীয় বায়নার পর একই বছরের ২১ জুলাই ০.১১৫৫ একর জমির ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে বায়না করে গোদাগাড়ী উপজেলার ইমামগঞ্জ চক্কহরণ এলাকার শরিফুল ইসলামের কাছে ১৬ লাখ টাকা নেয় ফারজানা হক। তৃতীয় বায়নার পর একই বছরের ১৭ আগস্ট ০.১৬২৯ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ৯৮০৯ নং দলিল মূলে নগরীর বহরমপুর এলাকার শফিকুল ইসলামের সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ৩৫ লাখ টাকা নেয়।
পরবর্তীতে ২৯ ডিসেম্বর ০.১৬২৯ একর জমি পবা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ১৬৬০৮ নং দলিল মূলে পবা উপজেলার বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেক ও মহিদুল হকের সাথে বায়না রেজিস্ট্রী করে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে ফারজানা হক।
বর্তমানে প্রতারণা, জমি দখল, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগে প্রতারণা চক্রের তিন আসামির মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক ও তার স্বামী রেজাউল হক জেল হাজতে আছে এবং অপর আসামী তোফায়েল জামিনে আছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ায়নার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন তারা উপশহর এলাকায় বি-৩০৫ বাড়িটি ফারজানা হক প্রতারণা’র মাধ্যমে দখল করে আছেন বলেও জানা গেছে। ফারজানার শ্বশুর তাঁর বাড়িটিও বিভিন্ন জনের নিকট বায়না করেন। কিন্তু ফারজানা সেই বাড়ী দখল রেখে বলেন, ছেলে মেয়ে বাড়ি বিক্রি করতে দিচ্ছে না। সেখানেও কয়েকজনের সাথে প্রতারণা করেন তারা। প্রতারণা শেষে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্যদিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
জানা গেছে চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি বাদশা ও ফারজানা পবা ভূমি সাব রেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক জানতে পারেন। তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এরপর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল। এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান।
আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাঠা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে, বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন।তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না। এতে করে আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
নগরীর লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকাবাসী জানায়, চক্রের সুনির্দিষ্ট কোনো আয় নাই। প্রতারণা তাদের পেশা। মানুষজনের নিকট টাকা নিয়ে চেক দেয় তারা। পরে তাদের হয়রানি করতে প্রতারক চক্র মামলা হামলা সহ নানা কূটকৌশল অবলম্বন করেন। মামলা ও হয়রানি’র ভয়ে কেউ এদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না।
এ বিষয়ে কথা বলতে তোফায়েলকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া হয়নি।
এদিকে মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা হক ও রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার সম্পর্কে এলাকাবাসী জানায় রেজাউল ইসলাম ওরফে ডলার শারিরীক প্রতিবন্ধী। তার বউ ফারজানা হককে আমরা ভোট দিয়ে কাউন্সিলর করি। তার পর থেকে তার প্রকৃত আসল চেহারা মানুষের সামনে বের হয়ে আসে। বিভিন্ন এনজিও করে মানুষকে হয়রানি করা টয়লেট নির্মান করার নামে টাকা নিয়ে নিম্নমানের টয়লেট তৈরী করে দেওয়া সহ বিভিন্ন অনিয়ম করতে থাকে।


প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ