সর্বশেষ সংবাদ :

স্বাস্থ্যবীমার সুফল পাচ্ছে রাবির শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে গত বছরের জুলাই থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চালু হয়েছে স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। এ বীমা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৮১৬ জন শিক্ষার্থী ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ টাকা সুবিধা পেয়েছেন। এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ফাইল। যার অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য বীমা চুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে (৩ মাসে ৪ বার) ৮০ হাজার টাকা ও বহির্বিভাগে (একদিনের হলেও প্রযোজ্য) ২০ হাজার টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতিমাসে একাধিকবার কনসালটেন্সি ফি, মেডিকেল ফি, প্যাথলজি ফি ইত্যাদি বাবদ এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বীমা চলাকালে মৃত্যু হলে সেই শিক্ষার্থী ২ লাখ টাকা পাবেন। এক বছরের মাথায় সেই সুভিধা এখন ভোগ করছে রাবির শিক্ষার্থীা।
বীমা কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮১৬ জন শিক্ষার্থীকে এ সুবিধা দিয়েছেন তারা। যার অর্থের পরিমাণ ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ টাকা। বীমা চলাকালে মৃত্যু হওয়ায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পেয়েছে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর পরিবার। এছাড়াও দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা পর্যন্ত এ সুবিধা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এখনও দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ফাইল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বীমার শর্ত বহির্ভূত হওয়ায় আবেদনের ফাইল প্রক্রিয়াধীন আছে ৬৬টি, যার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীমা সংক্রান্ত পরামর্শ এবং বিষয়গুলো তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সেল নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে এই বীমা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বীমা অনলাইন সিস্টেম হওয়ায় একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ৎঁ.ধপ.নফ প্রবেশ করলেই নিচে ংঃঁফবহঃ রহংঁৎধহপব দেখাবে। সেখানে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর আইডি নং ও রেজিস্ট্রেশন নং দিলেই তার প্রোফাইল চলে আসবে। সেখানে ফরম পূরণ করে সাবমিট করলে ফরম পেয়ে যাবে বীমা কোম্পানি। যদি ফরমে ভুল তথ্য না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বীমার টাকা চলে আসে। তবে বীমা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী রোগে আক্রান্ত হলে তারাই শুধু এর সুবিধা পাবেন।
স্বাস্থ্য বিমা থেকে ৬৭ হাজার ৫শ টাকা সুবিধা পেয়েছন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, আমি একটি জটিল রোগের কারণে প্রায় ৪ মাস অসুস্থ ছিলাম। আমার সুস্থ হতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বীমা থেকে আমি সুবিধা পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তবে টাকা পেতে আমার অনেক বেগ পেতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বীমায় যে জটিলতা রয়েছে তা কিছুটা কমিয়ে আনা উচিত বলে মনে করছেন এ শিক্ষার্থী।
কিডনিতে পাথর হওয়ার ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাবত প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু হাসনাত আবদুল্লাহর। পরে কাগজপত্র দেখিয়ে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আবেদন করলে ৭০ হাজার ৫শ টাকার মতো সুবিধা পান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য ৭০ হাজার টাকা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। আমি অনেক উপকৃত হয়েছি এ সুবিধা পেয়ে। তবে আমার এ সুবিধা পেতে প্রায় সময় লেগেছিলো তিন মাস। এক পর্যায় ভেবেছিলাম টাকাটা আর পাব না কিন্ত পেয়েছি। স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো কার্যালয় নেই ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এ বিষয়ে প্রশাসন নজর দেবে বলে আমি আশাবাদী।
রাবিতে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন ১৫-২০টি ক্লেইম জমা পড়ছে। ফলে আমাদেরকেও এ চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু এ বীমা অনলাইন সিস্টেমের আওতায় ফলে রাতেও আমাদের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য বীমা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার প্রধান এ এইচ আসলাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরামর্শে আমাদের এ স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হয়েছিল। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা সুবিধা পাচ্ছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। স্বাস্থ্য বীমা চালু হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং আবেদনকারী শিক্ষার্থীর এখন আরও বাড়ছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা। তবে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে অসুস্থ হতে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী হঠাৎ করে অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করা পরিবারের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বীমা চালু হওয়ায় পর থেকে এসব শিক্ষার্থী এ সুবিধার আওতায় এসে অনেক উপকৃত হয়েছে।


প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর