বাঘায় ৩ ইমো-বিকাশ হ্যাকারের মুখ থেকে ২৩ জনের নাম সনাক্ত

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘা। এখানে দিন-দিন বেড়ে চলেছে ইমো-বিকাশ হ্যাকারদের অবৈধ কর্মকান্ড। সম্প্রতি এ চক্রের ৩ সদস্যকে আটকের পর তাদের মুখ থেকে ২৩ জনের নাম সনাক্ত করে মোট ২৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে বাঘা থানা পুলিশ। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, এখানে হ্যাকারদের একটা বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। আটককৃত তিনজন হলো মো: রাজা আলী, মো: বুলবুল আহাম্মেদ ও আশিকুর রহমান আশিক। গত রবিবার(৭-মে)উপজেলার ছাতারী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। বিষয়টি উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচিত হয়েছে। পুলিশের এই অভিযানকে ইতিবাচর হিসাবে মন্তব্য করেছেন সভায় উপস্থিত সকল সদস্য সহ-স্থানীয় সু-শীল সমাজের নেত্রীবৃন্দ।

বাঘা থানা পুলিশের একটি মুখপত্র জানান, ধৃত এবং পলাতক আসামীগন তাদের ব্যবহৃত এড্রোয়েজ মোবাইল ফোনে অশ্রীল ও নগ্ন ভিডিও সংরক্ষন ও প্রদর্শন করে গনউপদ্রব সৃষ্টি এবং পরস্পর যোগ সাজসে প্রবাসী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনের ইমো-আইডিতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ পূর্বক একাউন্ট নিজেদের দখলে নিয়ে পরিচয় গোপন পূর্বক প্রতারণা এবং কৌশলে অর্থ আত্নসাত করে বিকাশ ও নগদ একাউন্টের মাধ্যমে ক্যাশ আউট করার অপরাধে তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় হাতে নাতে তিনজনকে আটকের সময় অজ্ঞাত নামা আরো ৩-৪ জন পালিয়ে যায়। অত:পর ধৃত তিন আসামির মাধ্যমে মোট ২৩ জনের নাম সনাক্ত করা হয়। এ সব আসামীদের অধিকাংশ জনের বাড়ী বাঘা ও লালপুর সীমান্ত এলাকায়। এদের বয়স ২০ থেকে ২৩ এর মধ্যে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সহজ হওয়ায় দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে ইমো ব্যবহার এবং বিকাশ হ্যাকিং খুব সহজ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীরা প্রায়স: প্রতারনার ফাঁদে পড়ছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা ফেসবুক, ইউটিউব এবং বিকাশ হ্যাক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে নানা কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধ কার্যক্রম । তবে এ সকল অপরাধিদের পেছেনে রয়েছেন কথিত রাজনৈতিক নেতা। যারা সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে তাদের সহায়তা দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গরিব ঘরের সন্তান হয়েও যারা হটাৎ করে দামি মোটর সাইকেল ব্যবহার-সহ আয়েশী জীবন যাপন করছে তারাই এ সকল অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। এ দিক থেকে যাদের এ মামলায় আসামী করা হয়েছে তাদের অধিকাংশজন গরিব ঘরের সন্তান। এদের মধ্যে রয়েছে- বাঘার সীমান্তবর্তী এলাকা গোরাঙ্গপুরের সুজন,মানিক ও আশিক। জোতনশীর গ্রামের শামিম ও শাওন । কলিগ্রামের মামুন। চাঁদপুর এলাকার জনি, শাহিন,আশিক, ইউনুস, সুজন ও রাজিব। খানপুর এলাকার আনোয়ার, শহিদুল ও ইমন ।আশরাফপুরের মামুন হোসেন। সুলতান পুরের মিলন ও টিপু । খায়ের হাটের মিলন ও মুক্তা সহ আরো অনেকে।

এলাকার লোকজন জানান, বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এর প্রবনতা এখানে অনেক বেশি। বিশেষ করে উপজেলার আলাইপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, পাকুড়িয়া, চাঁনপুর,খানপুর ও মীরগঞ্জ সহ পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া এবং মনিরহারপুর এলাকায় ছেঁয়ে গেছে এদের দৌরাত্ন । নাম প্রকাশ না করার সর্তে বাঘার এক কলেজ শিক্ষক জানান, উপজেলা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি ওয়ার্ড ভিত্তিক স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে গরিব ঘরের সন্তান হয়ে কারা দামি মোটর সাইকেল চালায় এবং আয়েশী জীবন যাপন করে তার একটা তালিকা সংগ্রহ করে তাহলে এর একটা বিহিত হওয়া সম্ভব।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, বিকাশ থেকে টাকা বের করাটা হ্যাকিং নয়, এটা এক ধরনের ডাকাতি। এদের দৌরাত্ন বেড়েছে, আমরা তিনজনকে আটক করে তাদের মুখ থেকে 23 জনের নাম পেয়েছি। এ থেকে প্রমানিত হয় যে, অত্র অঞ্চলে হ্যাকাদের সংখ্যা অনেক। আমরা এটি নির্মুল করতে চায়। তিনি জানান, গত এক বছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং থানা পুলিশ মিলে প্রায় দেড় শতাধিক হ্যাকারকে আটক করেছে । তিনি এ সকল অপরাধীদের আটক করতে সু-শীল সমাজ এবং সুধীজনদের একান্ত ভাবে সহায়তা কামনা করেন ।


প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৩ | সময়: ৬:১০ অপরাহ্ণ | সানশাইন