বীজ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় দেশি বীজ সুরক্ষার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার : বীজ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় দেশি বীজ সুরক্ষার দাবি জানানো হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর সবজি ব্যাংক হিসেবে পরিচিত পবা উপজেলার দাদপুর গ্রামে স্থানীয় জাতের চারা ও বীজ বিনিময় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই দাবি জানানো হয়েছে।
এ সময় দেশি বীজ সুরক্ষা করে ‘বীজ সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলি, বীজ সাম্রাজ্যবাদ রুখে দাড়াই’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়।
দাদপুর নারী উন্নয়ন সংগঠন এবং উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে এই বীজ মেলায় স্থানীয় কৃষক-কৃষানিরা নিজেদের চাষ করা স্থানীয় দেশীয় জাতের বীজগুলো প্রদর্শন করেন এবং একই সাথে বীজ ও চারা বিনিময় করে। এতে প্রায় ৫০ জন কৃষক-কৃষাণী বীজ নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বীজ সাম্রাজ্যবাদ রুখে দিতে প্রয়োজন কৃষক পর্যায়ে নিজস্বভাবে বীজ উৎপাদন, উন্নতকরণ, সংরক্ষণ এবং বিনিময় বাড়ানো। একই সাথে কৃষকের জ্ঞান ও উদ্ভাবনকে স্বীকৃতি দেওয়া। বীজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় দেশি বীজ সুরক্ষার ডাক দেন কৃষকরা।
বক্তারা বলেন, ফসল উৎপাদনে কিষান-কিষানির যে বিষয়টির অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো বীজ। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষি। কিন্তু দিনে দিনে কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৃষি ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়ছে। কৃষির জ্ঞান দক্ষতা এবং বীজের অধিকার কোম্পানিদের দখলে যাচ্ছে। কৃষকের হাতে বীজ নেই। সেই বীজের দখল এখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। এক সময় গ্রামগুলোতে বহুজাতের শস্যবৈচিত্র্য থাকলেও তা দিনে দিনে কমে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তার দোহাই তুলে দেশি বীজ এবং কৃষকের বীজগুলো দিনে দিনে হারিয়ে ফেলা হয়েছে। সে জায়গায় হাইব্রীড এবং জেনেটিক পদ্ধতিতে বিকাশমুখী বীজগুলো দখল দারিত্ব করছে। আর এই সকল হাইব্রিড বীজ বা জেনেটিক পদ্ধতিতে বিকাশমুখী বীজগুলো কখনোই কৃষক পুনঃপ্রজনন হয় না।
প্রতি বছরই কৃষককে বীজ কিনতে হয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে। শস্য বীজের একচেটিয়া বাজার দখলে এভাবে নিরবে বীজ সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করছে কোম্পানিগুলো। এভাবে কৃষক নিয়ন্ত্রিত কৃষি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে দিনে দিনে। কৃষকের হাতে বীজ নেই। এক মণ শস্যফসল বা ধান বিক্রি করে অনেক সময় এক কেজি বীজ নিতে হচ্ছে কৃষককে। তাই কৃষকদের দাবি বীজ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্টায় দেশি বীজগুলো সুরক্ষা, উন্নয়নে বিশেষভাবে সরকারেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। কৃষকের উদ্ভাবন এবং জ্ঞান দক্ষতাগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে।
বীজ মেলায় মোট ১৬০ জাতের স্থানীয় শস্য ফসলের বীজ প্রদর্শন করা করা হয়। বীজ মেলায় সর্বোচ্চ ৫৫ জাতের বীজ প্রদর্শন করেন কিষানি শম্পা খাতুন। দ্বিতীয় হন রূপালি খাতুন ৪৫ ধরনের বীজ প্রদর্শন করেন।
বীজমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক’র গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারি মো. শহিদুল ইসলাম। বীজ মেলাতে অংশগ্রহণ করতে আশপাশের গ্রামগুলোতে থেকেও কিষান-কিষানি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।


প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ