দুর্গাপুরে গুদাম সিন্ডিকেটের হোতা রুস্তমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও খাদ্য মজুদের গুদাম ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের প্রধান রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের একটি কপি ইতোমধ্যে এই প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। দুর্গাপুর পৌর সদরের সিংগা এলাকার ইসরাফিল আলম নামের এক ব্যবসায়ী ওই অভিযোগ করেছেন।
গত ৩০ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রাজশাহীর সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক সহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়।
ব্যবসায়ী ইসরাফিল আলমের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১৫ টাকা কেজি চাল) লাইসেন্স রুস্তম আলী নিজ নামে নিয়েছেন। ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ৩ টা লাইসেন্স ব্যবহার করেন রুস্তম আলী। এরমধ্যে একটা নিজের নামে ওপর দুটি বাবলু ও মঞ্জু নামের জনৈক ব্যাক্তির নামে। ছোট ছেলে খাদেমের নামে আরও একটা লাইসেন্স নিয়েছেন তিনি।
অথচ তার ছেলে দেশের বাইরে আছেন। দেশের বাইরে কেউ থাকলে তার নামে কোনো লাইসেন্স ইস্যু হবে না এইরূপ নিয়ম থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে লাইসেন্স নিয়েছেন রুস্তম আলী। এছাড়াও ইউনিয়নে পর্যায়ে চাল বিক্রির কথা থাকলেও পৌরসভা এলাকার ধরমপুর পাইকড়তলী মোড়ে চাল বিক্রি করেন রুস্তম আলী।
এছাড়াও রুস্তমের নিজ নামে টিসিবির লাইসেন্স নেয়া আছে। নিজের চালকল বা চাতাল কোনো কিছু না থাকলেও লাবনী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি লাইসেন্স ব্যবহার করে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের কাজ করেন রুস্তম।
অপরদিকে, চাল মিল মালিক সমিতির মোট ১১ টা লাইসেন্স থাকলেও এরমধ্যে ৭টা লাইসেন্স রুস্তম নিজেই ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে সরকারি গোডাউনে চাল সরবারহ করে থাকেন।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, এই রুস্তম আলী দীর্ঘদিন থেকে খাদ্য বিভাগে একটি নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সরকারের ধান-চাল-গম সংগ্রহ কর্মসূচি থেকে শুরু করে এমন কোন কর্মসূচি নাই যেখানে রুস্তম সিন্ডিকেটে জিম্মি নয়। এক কথায় উপজেলা খাদ্য অফিস তার নিয়ন্ত্রণে বা তার হাতের মুঠোয়। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তিনি যেভাবে পরিচালিত করেন সেভাবেই পরিচালিত হয়।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলীকে কখনো কখনো রুস্তম আলীর গোডাউন ঘরে বসে থাকতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীর বেশে। এ ধরনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হতে দেখা গেছে।
মৌসুমি ট্রেডার্স নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলেও নামে-বেনামে আরো লাইসেন্স নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে একাই খাদ্য অফিসকে বগলদাবা করে রেখেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও জানা যায়, উপজেলা খাদ্য অফিস ও খাদ্য গুদাম তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। রুস্তম আলীর সাথে যোগাযোগ না করলে কেউ সেখানে ব্যবসা করতে পারেন না।
এছাড়াও, রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। আমগাছী গ্রামের রওশন আরা নামের এক নারী রুস্তমকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন।
সম্প্রতি, সরকারে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ এনে সচেতন সমাজের ব্যানারে রুস্তম আলীর বিরুদ্ধে পৌর সদরের সিংগা বাজারে মানববন্ধন করা হয়েছে। তবুও রুস্তম আলী বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এর আগে ইসব আলী নামের এক ব্যবসায়ির কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন রুস্তম। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ইসব আলীকে খাদ্য গুদামের ভেতরেই বেধড়ক পেটান রুস্তম ও তার লোকজন।
ইসব আলী অভিযোগ করে বলেন, আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। উপজেলা খাদ্য গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করে থাকি। কিন্তু রুস্তম সিন্ডিকেট করে আমার কাছ থেকে চাঁদা চায়, না হলে আমাকে ধান-চাল সরবরাহ করতে দিবেন না। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে খাদ্য গুদামের ভেতরেই পেটানো হয়। পরে আমি রুস্তমের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করি।
অভিযুক্ত রুস্তম আলীর সাথে কথা বলতে তার ফোনে একাধিকার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা দেয়া হলেও তিনি কোনো প্রতিউত্তর করেননি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মাদ আলী রুস্তম আলীর দোকানে ওঠাবসার কথা স্বীকার করে বলেন, যেহেতু রুস্তম আলী আমার ডিলার সে কারণে তার দোকানে আমি ওঠাবসা করি। রুস্তম আলীর ছেলে দেশের বাইরে আছে এই খবর তিনি জানেন বলেও স্বীকার করেন। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজশাহীর সমন্বিত আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের লিখিত আবেদনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আবেদন অফিসে জমা হলে মাসিক পর্যালোচনা মিটিংয়ে উপস্থাপিত হবে। আমলযোগ্য হলে অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ