সর্বশেষ সংবাদ :

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারতের অবস্থান থেকে যে সুবিধা নিচ্ছে বাংলাদেশ

সানশাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের নেয়া মেগা প্রজেক্টগুলোর মধ্যে অন্যতম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। যেটি রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশের পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণ হচ্ছে। এতদিন সবকিছু ঠিক চললেও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজে বাধ সাধে। কারণ যুদ্ধের ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে বেশ কিছু রাশিয়ান কোম্পানি। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজেও দেখা দেয় ধীরগতি। এমনকি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে বাংলাদেশের বন্দর থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম বহনকারী রুশ জাহাজ।
এরপর থেকেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই রুশ জাহাজের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? এক্ষেত্রে আভাস মিলেছে, প্রতিবেশী ভারতকে ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে সুবিধা নিতে পারে বাংলাদেশ। দেশটির বন্দরে রুশ জাহাজটিকে প্রবেশ করিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিজ দেশে আনতে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকেও খুব একটা বাধা মেলেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনও রুশ জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়লে সরকারের তাতে কোনও সমস্যা নেই। এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম বয়ে আনা রুশ জাহাজটি প্রতিবেশী ভারতের হলদিয়া বন্দরে মাল খালাস করতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এরপর সেসব মালামাল ভারত থেকে সড়ক পথে বা হলদিয়া বন্দর থেকে অন্য জাহাজ যোগে বাংলাদেশে আনা হতে পারে।
জানা যায়, রুশ পতাকাবাহী ওই জাহাজটির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস থেকে ওই জাহাজটি মোংলা বন্দরে প্রবেশে আপত্তি জানানো হয়। একারণে জাহাজটিকে চ্যানেল থেকে মোংলা বন্দরে প্রবেশ করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি ও সংবাদ সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে এমনটায় জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, হলদিয়ায় মাল খালাস করার পর ওই সব সরঞ্জাম সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠানো হতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে, তাই এখন ভারতের একটি বন্দরকে ব্যবহার করে ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ঘুরপথে আনার ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইউএনবি জানায়, রুশ পতাকাবাহী ওই জাহাজটি ভারতের হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে পারে। এর পর সেখানে জাহাজ থেকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল খালাস করবে। হলদিয়া বন্দর থেকে অন্য জাহাজ যোগে ওই মালামাল বাংলাদেশে আনা হতে পারে।
খুলনার কনভেয়ার শিপিং লাইন্সের অপারেশন কর্মকর্তা সাধন কুমার জানান, রুশ পতাকাবাহী ওই জাহাজটির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় জাহাজটি মোংলা বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি বলে তারা শুনেছেন। তবে মালামাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হয়তো দেশের বাইরে অন্য কোন বন্দরে জাহাজটি ভিড়িয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট করে মালামাল রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেবে।
তিনি আরও জানান, আগেও রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা মালামাল নিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক জাহাজ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। বন্দরে খালাস করার পর ওই মালামাল রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। এর আগে ‘উরসা মেজর’ নামে এই জাহাজটি গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছিল।
কিন্তু ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, এটি আসলে তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ নামে একটি রুশ জাহাজ, সেটির রং আর নাম পাল্টে ‘উরসা মেজর’ নামে চালানো হচ্ছে। এই জাহাজটিকে বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে তা যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে, সেটাও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় উরসা মেজর-কে বাংলাদেশের মোংলা বা অন্য কোনও বন্দরেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের কথা ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি-কেও জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই ওই রুশ জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে মাঝসমুদ্রে ভাসছিল।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ