রাজশাহী ও চাঁপাইয়ে ‘ম্যাঙ্গোপঞ্জি’ প্রকাশ : আমরাজ্যে আজ থেকে পাকা আম

স্টাফ রিপোর্টার : মধুমাস জৈষ্ঠ্য আসতে এখনো সপ্তাহ দুয়েক বাকী। তবে এরই মধ্যে মধুমাসের রসালো ফল লিচু এসে গেছে রাজশাহীর বাজারে। আর আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে আসবে সুমিষ্ট ফল আম। চাষিরা আজ বৃহস্পতিবার থেকেই গুটি জাতের পাকা আম বাজারে তুলতে পারবেন। বলতে গেলে এবার মৌসুম শুরুর দুই সপ্তাহ আগেই রাজশাহীর বাজারে মিলবে পাকা আম। শুধু রাজশাহী নহয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমও বাজারে মিলবে আজ থেকে।
ইতিমধ্যে রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে পাকা আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকেই বাগানের আম নামাতে পারবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এদিন থেকেই মুলত: গুটি জাতের আম নামানোর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের আমের কারবার।
বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক শেষে এই মৌসুমের আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন। অপরিপক্ক আম বাজারজাত ঠেকাতে এ উদ্যোগ বলে জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ।
বৈঠক শেষে জানানো হয়, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গোপঞ্জি’ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় আম নামানোর এই তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. শামীম আহমেদ।
সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরের সব ধরনের গুটি জাতের আম নামানো যাবে আজ বৃহস্পতিবার ( ৪ মে) থেকে। আর উন্নত জাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ নামানো যাবে ১৫ মে থেকে। এছাড়া লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৫ মে থেকে নামিয়ে হাটে তুলতে পারবেন বাগানমালিক ও চাষিরা। আর ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে। ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে।
এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে। নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর ঐতিহ্য হচ্ছে আম। বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে তাই প্রতি বছরই রাজশাহীতে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবারও কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে যদি কোনো কৃষক বা ব্যবসায়ী অপরিপক্ক আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আবহাওয়াগত কারণে কোথাও আগেই আম পেকে যায় তাহলে তাকে স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে তারপর গাছ থেকে নামাতে হবে। এরপর বাজারজাত করতে পারবেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আরও জানান, জেলায় আমের হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও বিষয়টি দেখভাল করবেন।
এদিকে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাড়ার কোনো ধরনের সময়সীমা থাকছে না এ বছর। পরিপক্ক হলেই আম পাড়তে পারবে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীরা। নিরাপদ আম বিপণনে মনিটরিং সেট গঠন করা হবে জেলা জুড়ে।
বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপনন ও বাজারজাতকরণের লক্ষে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান জেলা প্রশাসক একে এম গালিভ খাঁন বলেছেন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আম শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যাতে করে কৃষক যেন নায্যমূল্য পান। সেই সঙ্গে কেউ যেন ওজনে বেশি নিতে না পারে সেই দিকেও নজর দেয়া হবে। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক আম বাজারজাত করলে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। সভায় নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে।
তিনি জানান, রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে। এবার জেলায় ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল এসেছিল। গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর গুটি জাতের আম ২০ মের পর বাজারে আসলেও এবার আবহাওয়াগত কারণে আগেই বাজারে আসছে পাকা আম। এদিকে ইতিমধ্যে রসালো ফল লিচুও বাজারে এসেছে। মৌসুমের শুরুতে আসা লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশটি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন এখন বাজারে লিচুর সরবরাহ কম তাই শুরুতেই দম বেশী। আর কদিন পর বাজারে পর্যাপ্ত লিচু আসলে দাম তুলনামুলকবাবে কমে যাবে।


প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ