আত্মহত্যার চেষ্টা করা সেই কৃষকের খোঁজ নিলেন এমপি বাদশা

সানশাইন ডেস্ক : সম্প্রতি রাজশাহীতে ধান খেতে পানি না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা আদিবাসী কৃষক মুকুল সরেনের সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
মঙ্গলবার সকালে গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে ওই কৃষকের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন এমপি বাদশা। এসময় তিনি আদিবাসী কৃষকের কাছে ওইদিনের ঘটনা বিস্তারিতভাবে শোনেন ও তাঁর বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন।
একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া বর্ষাপাড়া গ্রামে আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার জন্য নির্মিত একটি স্কুলও পরিদর্শন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমপি বাদশা। এসময় আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে স্কুলটি চালু করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ।
আদিবাসী কৃষকের সঙ্গে কথা বলার পরে ফজলে হোসেন বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের একের পর এক ঘটনা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যক্রমকে কঠিনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাদের অব্যবস্থাপনা এখন পরিষ্কারভাবে প্রতিয়মান। বিএমডিএর বিরুদ্ধে অনেক পুরনো অভিযোগ, তারা আদিবাসীসহ অনেক সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে পানি নিয়ে বৈষম্য করে। এটি অত্যন্ত অমানবিক। এটি চলতে পারে না। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সিস্টেম নিয়ে সরকারের ভেবে দেখার সময় এসেছে।
এসময় সাংসদ বাদশার সঙ্গে মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রমানিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, নদী ও পানি গবেষক মাহাবুব সিদ্দিক মিন্টু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গনেশ মার্ডি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, দপ্তর সম্পাদক ও মুখপাত্র সুভাষ চন্দ্র হেমব্রমসহ স্থানীয় আদিবাসী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আদিবাসী কৃষকের সঙ্গে কথা বলার পরে এদিন দুপুরেই রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এসময় তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে তার কাছে আহ্বান জানান। পরে সামগ্রিক এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার প্রশাসন যথাযথভাবে কাজ করছে বলে এমপি বাদশাকে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল ধান খেতে পানি না পেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন সাঁওতাল কৃষক মুকুল সরেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে ওইদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পাকস্থলী ধুয়ে বিষ বের করার পর তাকে শঙ্কামুক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন চিকিৎসক।
মুকুল সরেনের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম গোপাল সরেন। বর্ষাপাড়া গ্রামের পাশের গ্রামটি নিমঘটু। গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডিও বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়।
অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের কৃষক মুকুল সরেন। অভিনাথ ও রবির মৃত্যুর পর বিভিন্ন পক্ষ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে।
ওইসময় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এ ঘটনাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড আখ্যায়িত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন। এসময় তার হস্তক্ষেপেই অভিনাথ ও রবির পরিবারের পক্ষ থেকে নলকূপ অপারেটরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
পরবর্তীতে এমপি বাদশা এই ইস্যুটি মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও কথা বলেন। পরে কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই আদিবাসী কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় এবং বিষপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়।
এ ঘটনার বছর না পেরুতেই আবারো জমিতে পানি না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটলো। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুকুল সরেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাঁকে পানি দিচ্ছিলেন না।
রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাঁকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নেবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ