সর্বশেষ সংবাদ :

শান্তির নগরীতে অশান্তির লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার : 

শান্তির নগরীতে চলছে অশান্তির লোশেডিং। দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যায় যখন তখন বিদ্যুতের আসা-যাওয়া লেগেই আছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপরও লোডশেডিং দিচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। অস্বাভাবিক ও অসহনীয় লোডশেডিংয়ে তাই রাজশাহীর সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নাকাল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কেবল রাজশাহী মহানগর কিংবা জেলা নয়, পুরো বিভাগের আট জেলাতেই চলছে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা। আর নিদারুণ এই কষ্ট বর্ণনাতীত।

 

নেসকো সূত্র বলছে, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলা সদর রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এবং ৬টি উপজেলা সদর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী, বগুড়ার দুপচাচিয়া ও শেরপুরে নেসকো রাজশাহী থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

 

 

 

 

গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ ছিল ৬৩১ মেগাওয়াটের। ঘাটতি ছিল ৯৬ মেগাওয়াট। সোমবার (১৭ এপ্রিল) শুধুমাত্র রাজশাহী মহানগরীতে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১০৬ মেগাওয়াট। কিন্তু এতেও ঘাটতি রয়েছে ৩২ মেগাওয়াট। নেসকোর দাবি, সপ্তাহ তিনেক আগেও বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫০০ মেগাওয়াটের মতো। কিš‘ তা হঠাৎ বৃদ্ধি ৭০০ থেকে ৭৫০ পর্যন্ত ঠেকেছে।

 

 

 

একারণে রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। লোডশেডিং-এ অতিষ্ঠ মানুষ নেসকোর গ্রাহক সেবার নম্বরে কল করলেও তা ধরা হচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেসকো কর্মচারী জানান, দিনের অধিকাংশ সময় লোডশেডিং হচ্ছে। শত শত ফোন, আর তাদের সবার একই কথা- ‘আর কতক্ষণ লাগবে লোডশেডিং শেষ হতে?’ এ প্রশ্নের জবাব না থাকায় বিরক্ত হয়ে ফোন উঠিয়ে রাখছেন গ্রাহকসেবার অপারেটর।’

 

 

 

এদিকে চলছে রমজান। পবিত্র এ মাসে দেশের অধিকাংশ মুসলমান নর-নারীই সিয়াম ও সালাতে মশগুল থাকেন। কিন্তু বৈশাখের তীব্র দাবদাহ ও ক্ষণে ক্ষণে লোডশেডিং -এ অতীষ্ঠ রাজশাহীবাসী। যখন তখন লোডশেডিং এর কারণে জনমনে বিরাজ করছে অসন্তোষ। ঠিকভাবে বিদ্যুৎ না মেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দেখাচ্ছেন ক্ষোভ।

 

 

নগরীর নওহাটার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজশাহীতে স্মরণকালের ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। বিদ্যুৎ এখন আর যায় না, মাঝে মাঝে আসে।’ মাসুদ রানা নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী হারিকেনগুলো স্বযত্নে রাখুন। ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশে তা ভালো কাজে দেবে।’

 

 

 

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে অনেকেই জানতে চেয়ে লিখছেন, ‘আমার বাসায় ২ ঘন্টা কারেন্ট নাই। আপনার এলাকায় কতক্ষণ?’ বিদ্যুতের কারণে পচতে শুরু করেছে বাড়ির ফ্রিজের মাছ-মাংস, শাক-সবজি ও ফলমূলও। শুধু বাসা বাড়িতেই নয়, বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে অফিসে-আদালতের কার্যক্রম পরিচালনায় চরম ¯’বিরতা নেমে এসেছে। জেনারেটর, আইপিএস ও ইউপিএস কোনো কিছুই দিয়েই অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকানপাট ও বাসাবাড়ি স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ব্যহত হয়েছে।

 

 

মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকার এ্যাপেয়ারেলস গার্মেন্টেসের সত্ত্বাধিকারি নাহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে এমনিতেই ভ্যাপসা গরম। তারপরও বিদ্যুত থাকছে না। ঈদের আগে এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় আমাদের ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। নেসকো যদি আগের মতো দিনের কোন এক সময় বিদ্যুত টেনে রেখে সন্ধ্যার পর বা কাজের সময়গুলো ঠিকভাবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুত সরবরাহ করতো তবে এমন সঙ্কটে পড়তাম না।

 

 

বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে কথা হয় নেসকোর রাজশাহী বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদের সাথে। তিনি বলেন, আগের তুলনায় চাহিদা বেড়েছে প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট। প্রায় প্রতিদিনই ৬০ থেকে ৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে। সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং এর মাধ্যমে সমন্বয় করা হচ্ছে। তাছাড়া সপ্তাহ খানেক হয়েছে বিভাগের প্রত্যেকটি অফিস-আদালত, মসজিদ, বাড়ি-ঘরে এসি, ফ্যান, লাইটের ব্যবহার বেড়েছে। আলোক সজ্জার কারণেও পুড়ছে বিদ্যুৎ। তাই স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের যে চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণে আমরা অপারগ।

 

 

কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, তীব্র গরমের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার সব জায়গাতে বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে যদি তাপমাত্রা কমে ও বৃষ্টি হয় তবে বর্তমানের যে ২৫০ মেগাওয়াট চাহিদা বেড়েছে তা কমে যাবে। তাছাড়া বিদ্যুত বিভাগ চেষ্টা করছে শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতায়নের। রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু হলেই আমরা আশা করছি বিদ্যুতের আর ঘাটতি থাকবে না।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৩ | সময়: ১১:০৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine