চারঘাটের বিধবাপল্লীর ইতিহাস ভুলা যাবে না: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

মিজানুর রহমান, চারঘাট: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি বলেছেন, চারঘাটের রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় এক ইতিহাস। ১৩ এপ্রিল আসলেই সেই ভয়াল ইতিহাসের কথা মনে করে দেয় সারদাসহ রাজশাহীর মানুষকে। সারদা থানাপাড়া সোয়ালোজ তার স্বাক্ষী। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বেচে আছেন, বা যারা শহীদ হয়েছেন তাদের কথা তুলে ধতে হবে।
রবিবার দুপুর ২ টার দিকে চারঘাট উপজলা প্রশাসন কর্তৃক উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত অসহায় প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেক বিতরন এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী অতর্কিত চারঘাট আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধাসহ দুই শতাধিক নিরীহ মানুষকে নৃসংশভাবে হত্যা করে। চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ছিল তৎকালীন চারঘাট থানার মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ক্যাম্প।
১১ এপ্রিল সারদা পুলিশ একাডেমির অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে ক্যাপ্টেন রশিদের নেতৃত্বে অস্ত্র লুট করে মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ে নেয়। পাক সেনাদের ভারি অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন প্রাণপণে যুদ্ধ করেও টিকে থাকতে পারেননি।
চারঘাট বাজার ও আশপাশের এলাকায় বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধাসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ শহীদ হন। এরপর পাক সেনারা সারদা পুলিশ একাডেমিতে অবস্থান নেয়। এদিকে চারঘাট বাজার থেকে আধা কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং সারদা পুলিশ একাডেমি সংলগ্ন থানাপাড়ার সহস্রাধিক নারী পুরুষ ও শিশু প্রাণভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পদ্মার পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয় রাজাকাররা পাক সেনাদের এ খবর দিলে ওই দিন বিকেলে তারা পদ্মার পাড়ে জড়ো হওয়া সহস্রাধিক মানুষকে ঘিরে ফেলে। হানাদার বাহিনী সমবেত জনতার মধ্য থেকে নারী ও শিশুদের বের করে দিয়ে পুরুষদের কয়েকটি লাইনে সারিবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেয়।
কয়েকজনকে হিন্দু না মুসলিম তাও পরীক্ষা করা হয়। নিশ্চিত মৃত্যুর কথা বুঝতে পেরে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। এরপরেই মেশিনগান গর্জে ওঠে। সংঘটিত হয় ইতিহাসের এক নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। এক রাতেই সারদা থানাপাড়া গ্রামটি হয়ে পড়ে পুরুষশুন্য। গ্রামটি আজও সকলের কাছে বিধবা পল্লী নামেই পরিচিতি।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে বলেন, তোমরা তোমাদের এলাকার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুখ থেকে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইাতহাস লিপিবদ্ধ করবে।
এরপর বিকেল ৩ টার দিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি চারঘাট সদর ইউনিয়নের রাওথা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নুর হোসেনের কবর জিয়ারত করেন। এসময় তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। পরে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০২৩ | সময়: ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ