তাহেরপুর পৌর আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সম্পাদকের পদ প্রত্যাখান

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক কাউসার আলী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মাহাবুর রহমান বিপ্লব। শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি বিশেষ সভা করে তাহেরপুর পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাদের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়।
এর পরের দিন তারা দুইজনেই এই দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি দিয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারীতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দিয়েছে আবুল কালাজ আজাদ। তাদের চিঠিগুলো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান গ্রহন করেছেন।
কাউসার আলী ও প্রভাষক মাহাবুর রহমান বিপ্লব তাদের চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর মৃধা মুনসুর ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ। বাগমারা উপজেলার মধ্যে তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগ অত্যান্ত সুশিক্ষিত এবং সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সংগঠন।
তারা আরও উল্লেখ্য করেন, আবুল কালাম আজাদ তাহেরপুর পৌরসভাসহ সমগ্র বাগমারা উপজেলায় একজন অত্যান্ত জনপ্রিয় নেতা, শিক্ষানুরাগী এবং সমাজসেবক। তার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে বাগমারার এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ভয় পেয়ে সংগঠন বহির্ভুত এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থিভাবে তাদেরকে পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন এবং আমাদের অবগত না করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যা আমরা ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতাবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানান তারা।
অপরদিকে, আবুল কালাম আজদ তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, আওয়ামী লীগ বাগমারা উপজেলা শাখার সভাপতি এনামুল হক এমপি তাঁর সংসদীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে আজ দলকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌছে দিয়েছে। আত্মীয় লীগে পরিণত করেছে দলকে। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতার ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। অগঠনতাত্রিক ভাবে বিভিন্ন পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সম্পাদককে অব্যহতি দিয়ে পছন্দের লোককে পদ দিয়ে দলকে লিমিটেড কোম্পানীতে পরিনত করে ফেলেছে।
তিনি চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন, টিআর কাবিখার অর্থ বিভিন্ন ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে ব্যবহার না করে নিজে আত্মসাত করে উন্নয়ন বাঁধা গ্রন্থ করেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের আত্মীয় স্বজনকে সভাপতি বানিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর এই সব দূর্নীতি ও স্বজনগ্রীতির প্রতিবাদ করলে দল অথবা পদ থেকে বহিষ্কার কিংবা অব্যহতি প্রদান করেন। যার সর্বশেষ শিকার তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আবুল কালাম আজাদ তার চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, আমি তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং তিন বারের নির্বাচিত মেয়র। আমার নেতৃত্বে আজ তাহেরপুর তথা সারা বাগমারায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। আমার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতায় ইর্ষান্বিত হয়ে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমাকে এবং সভাপতিকে পদ থেকে অব্যহতি প্রদান করেছে। যা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে আবুল কালাম আজাদ।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পদাক বরাবরে পাঠানো দুইটি ঘোষণাপত্র ও তিনটি অভিযোগপত্র পেয়েছে। সেগুলো জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে উপস্থাপন করা হবে। বিষয়টি তারাই দেখবেন।
শনিবার তাহেরপুর পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর মৃধা মুনসুর ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাদের অব্যহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলার সোনাডাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের হল রুমে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। সভা উপস্থাপনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম সারওয়ার আবুল।
দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া আবুল কালাম আজাদ তাহেরপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় গণসংযোগসহ নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এর পর থেকে স্থানীয় এমপির সঙ্গে তর বিরোধ সৃষ্টি হয়।


প্রকাশিত: মার্চ ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ