সর্বশেষ সংবাদ :

নাটোরে দাম না পেয়ে চাষীরা রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন বরই

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ আড়তে কুল বরইয়ের দাম না থাকায় রাস্তার পাশে ঢেলে ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন চাষীরা। এতে চাষীদের লোকসানতো হচ্ছেই, উপরন্তু বাগান থেকে আড়তে আনার পরিবহণ খরচও পকেট থেকে যাচ্ছে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষীরা ভ্যানে করে বাউকুল ও আপেল কুল বরই নিয়ে এলেও ব্যাপারীরা দাম বলতেই চাচ্ছেন না। কেউ কেউ দাম বললেও তাতে পরিবহণ খরচই উঠবে না। এতে হতাশ হয়ে চাষীরা ঝুড়িতে করে আনা বরই বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন।
সন্ধ্যার দিকে বনপাড়া পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেসব বরই ময়লার গাড়িতে তুলে পৌরসভার নির্ধারিত ময়লার ভাগাড়ে নিয়ে ফেলছেন। দাম না থাকায় এভাবেই চাষীদের পরিশ্রমের ফসল ময়লার ভাগাড়ে গিয়ে পড়ছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বরই চাষী হোসেন আলী জানান, বাউকুল জাতের ৫ মণ বরই নিয়ে আড়তে এলে কেউই নেয়ার জন্য আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি দামও বলছে না কেউ। উল্টো আরও ভাল মানের বরই রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আড়তদারেরা বলেন, এ সব বরইয়ের চাহিদা নেই। তাই বাধ্য হয়ে মনের কষ্ট মনে রেখে বরইগুলো ঢেলে ফেলে দিয়েছি।
ধানাইদহ এলাকার বরই চাষী আবু তাহের জানান, ৪ মণ বাউকুল বরই নিয়ে আড়তে এলে আড়তদার ও মহাজনেরা ১০০-১২০ টাকা মণ দাম বলছে। দাম শুনেই মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু উপায়ও নেই, বরই তোলার কামরার মজুরী দিতে হবে, ভ্যান ভাড়া আছে। তাই বাধ্য হয়ে সে দামেই বেচলাম।
লক্ষ্মীকোল এলাকার আব্দুস সালাম জানান, একটু জোড় করেই আড়তে পাঁচ মণ আপেল কুল দিলাম। আড়তের শ্রমিকরা সবচেয়ে ভালো দেখে আড়াই মণ রেখে বাদবাকিগুলো রাস্তার ধারে ফেলে দিলো।
এ ব্যাপারে জঙ্গল বাবা ফল ভান্ডারের আড়তদার মোজাফ্ফর হোসেন জানান, এ সময়ে বরই এর স্বাদ কম, চাহিদাও কম। বর্তমানে বাউকুল, আপেল কুল ও কাশ্মীরী জাতে কুলের দাম মৌসুমের সময় ১০০০-১২০০ টাকা হলেও বর্তমানে এগুলোর দাম মণ প্রতি ১০০-২৫০ টাকার বেশি না।
এ দামে কিনে যেগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো সেগুলো ব্যাপারীরা কিনছে, অবশিষ্টগুলো কিনছে না। ফলে বাধ্য হয়ে এই দুই জাতের আড়তে আসা বরইয়ের অর্ধেকই ফেলে দিতে হচ্ছে।
ডায়মন্ড ফল ভান্ডারের আড়তদার ডায়মন্ড হোসেন জানান, ভরা মৌসুমে বল সুন্দরী ও ভারত সুন্দরী জাতের বরই মণ প্রতি ৬০০০-৬৫০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি মণ সর্বোচ্চ ১০০০-১২০০ টাকা দরে কিনছেন মহাজনেরা। অন্যগুলোর একেবারেই দাম নেই। মূলত বাজার যেনো নষ্ট না হয় সে জন্য মহাজনেরা বল সুন্দীর ও ভারত সুন্দরী ছাড়া অন্য বরই বাজারে পাঠাতে চাচ্ছেন না।
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, বনপাড়া বরই আড়ত হয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ বরইয়ের আড়ৎ হয়ে উঠেছে। আমরা পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে আড়ৎদারদের নানা ভাবে সহযোগিতা করছি।
এখানকার প্রায় ২৫ টি আড়ৎ থেকে থেকে প্রতিদিন ২০-২৫ টি ট্রাক বরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শান্তিপূর্ণ ব্যবসা বান্ধব পরিবেশের কারণে দিন দিন এ বরই আড়ত দেশের অন্যতম শীর্ষ আড়ত হয়ে উঠছে।


প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ