সর্বশেষ সংবাদ :

গোদাগাড়ীতে তিন দশক পর সাঁওতাল সম্প্রদায় ফিরে পেলো কবরস্থান

স্টাফ রিপোর্টার: ভূমির বরপুত্র তারা। আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন ও অস্তিত্বের প্রতীক। আদিবাসীরা চিরকাল ভূমি, বন ও প্রকৃতিকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখেছেন, কোনোদিন বেচাকেনার বিষয় হিসেবে দেখেননি। এ কারণে আদিবাসীরা নিজস্ব ভূমিকে দলিলভুক্ত করেননি। কারণ ভূমি বা মাটি হলো মায়ের মতো। তাই মা’কে কি কেনাবেচা করা যায়? এটি হলো আদিবাসী ওয়ার্ল্ডভিউ। এখানেই আদিবাসীদের ভূমি মালিকানার সংস্কৃতির সঙ্গে আধুনিক আইনি ব্যবস্থার সংঘাত। ফলে আদিবাসীরা তাদের জীবনের মূল অবলম্বন ভূমি হারিয়েছেন। এখনো হারাচ্ছেন।
প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী চক্র আদিবাসীদের জমিজমা কেড়ে নিয়েছে। জাল দলিল দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে সর্বস্বান্ত করেছে আদিবাসীদের। আর যাদের রক্ষা করার কথা আদিবাসীদের অধিকার, তারা সব সময় শক্তিমানদের সহায়তা করেছে প্রত্যক্ষ, অথবা পরোক্ষভাবে। জমি নিয়ে হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন তারা।
তবে এবারের ঘটনা অনেকটা ব্যতিক্রম এবং প্রশাসন প্রসংশার দাবি রাখে। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ভূমিদস্যুদের কবল থেকে সাঁওতাল সম্প্রদায় ফিরে পেয়েছে পূর্বপুরুষদের কবরস্থান। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের নির্দেশনায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান এই কবরস্থান উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি এদিন শনিবার (১১ মার্চ) ভূক্তভোগীদের বুঝিয়ে দেন তিনি।
জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কাদমা ফুলবাড়ী রক্ষাগোলা সংগঠনের জনগণ গ্রামের নিকটস্থ খাড়ির পাশের সরকারী ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত জমি যার মৌজা-মহাদেবপুর, জেএল নং-১৪৭, দাগ নং-৪২৪, জমির পরিমাণ ৮৭ শতক। সেই জমিটি ওই এলাকার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত কবরস্থান হিসাবে ব্যবহার করে আসছে এবং বিভিন্ন খতিয়ানে কবরস্থান উল্লেখ আছে।
এই কবরস্থানটি কাদমা ফুলবাড়ী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তাহাসিন আলী ও তার ভাই আব্দুল গণি ৮৭ শতক জমির মধ্যে ১২ শতক জমি কবরস্থান রেখে বাকি ৭৫ শতক জমি দখল করে চাষাবাদ করে আসছিলো। তাদেরকে বারবার কবরস্থানের জমি ছেড়ে দেবার জন্য বলা হলেও তারা সেই জমি জবর দখল করে চাষাবাদ করে আসছিলো। কোন উপায় না পেয়ে গত ৯ মার্চ রক্ষাগোলা সংগঠনের মোড়ল লুইস কিস্কুর নেতৃত্বে সংগঠনের জনগণ গোদাগাড়ী ভূমি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন।
সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এসিল্যান্ড সবুজ হাসান বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করে নিজেই তাৎক্ষনিক কবরস্থানটির তদন্ত করে দখলের সত্যতা পান। শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারসহ এসিল্যান্ড নিজে উপস্থিত থেকে গ্রামবাসী ও দখলদারদের উপস্থিতিতে কবরস্থানের ৮৭ শতক জমি মেপে সিমানা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন সিসিবিভিওর শাখা কার্যালয়ের ইনচার্জ ও উর্ধতন মাঠকর্মকর্তা নিরাবুল ইসলাম, সমাজ সংগঠক ভূমি নিরঞ্জন কুজুর, সমাজ সংগঠক প্রেঁমচাদ এক্কা, স্থানীয় সার্ভেয়ার আলমগীর হোসেন, গোদাগাড়ী উপজেলা ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ গ্রামের অন্যান্য জনগণ।
কবরস্থানটি উদ্ধার হওয়ায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকজন জেলা প্রশাসক ও গোদাগাড়ীর এসিল্যান্ড সবুজ হাসানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন ভূমিদস্যুদের হাতে থাকা কবরস্থানটি পেয়ে খুশি হয়েছি। ভবিষ্যতে এমন কাজে পাশে থাকার আশা প্রকাশ করেন তারা।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সবুজ হাসান জানান, কবরস্থানটির ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর নিজে সময় নিয়ে তদন্ত শুরু করি। দখলকারিরা ১৯৯২ সালের দিকের কিছু কাগজপত্র দেখায়। সেই কাগজপত্রাদি আমার কাছে সঠিক না মনে হওয়াতে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনায় কবরস্থানটি তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।


প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ