সর্বশেষ সংবাদ :

রানের রেকর্ড গড়ে ‘ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট’ শান্ত

স্পোর্টস ডেস্ক: সতীর্থদের সঙ্গে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচ হারার কারণেই হয়তো তার চোখেমুখে ছিল আঁধার। তবে তার নাম ঘোষিত হতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠল সেই চেহারা। এক চিলতে হাসিও খেলে গেল তার ঠোঁটের কোণে। হাসিমুখেই মঞ্চে উঠে গ্রহণ করলেন পুরস্কার। দেশের ক্রিকেটে তুমুল আলোচিত-সমালোচিত এই ব্যাটসম্যানই এবারের বিপিএলের সেরা ক্রিকেটার।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেনরাও ছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার প্রবল দাবিদার। তবে আসরজুড়ে দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফাইনালে খেলায় অবদান রেখে এবং ফাইনালেও ফিফটি করে শেষ পর্যন্ত সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন শান্তই। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ট্রফি ও ১০ লাখ টাকা। টুর্নামেন্টে ১৫ ইনিংস খেলে ৩৯.৬৯ গড় ও ১১৬.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ৫১৬ রান শান্তর। সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রনি তালুকদার পড়ে আছেন ৯১ রান পেছনে।
শুধু এবারের বিপিএলেই নয়, আরেকটি কীর্তিতে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের সবাইকে। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে গড়েছেন এক আসরে ৫০০ রান ছোঁয়ার রেকর্ড। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে এক আসরে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল ২০১৯ সালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে রাইলি রুশো (৫৫৮)। রেকর্ড গড়া রানের পাশাপাশি ১টি উইকেট ও ৫টি ক্যাচও আছে তার। তবে টুর্নামেন্ট সেরার বিবেচনায় সেসব হয়তো সেভাবে নেওয়াই হয়নি। তার ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে জাতীয় দলে আসা ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি। তার প্রতি নির্বাচক কমিটি, টিম ম্যানেজমেন্টের প্রবল আস্থার কারণে সুযোগ তিনি পেয়ে যাচ্ছেন। তাতে ট্রল, সমালোচনার শিকারও হয়েছেন নিয়মিত। তবে একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরতেও শুরু করেছেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। এরপর বিপিএলের এই সাফল্য।
ফাইনালে হারলেও ৪৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে ভালো ভিত গড়ে দেন শান্ত। টুর্নামেন্টের শুরুটাও তিনি করেছিলেন ভালো। গত ৬ জানুয়ারি উদ্বোধনী ম্যাচে ছোট রান তাড়ায় তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৩ রান করে। পরের ম্যাচে রান আউট হওয়ার আগে করেন ৪০ বলে ৪৮। তৃতীয় ম্যাচে আউট হয়ে যান ২১ বলে ১৯ রান করে।
চতুর্থ ম্যাচে তিনি দেখা পান আসরের প্রথম ফিফটির। ঢাকা ডমিনেটর্সের বিপক্ষে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন ৩৯ বলে। এই দলের বিপক্ষেই অবশ্য চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারেনি। সহজ রান তাড়ায় সেদিন ২০ বল খেলে করতে পারেন স্রেফ ১২ রান। চট্টগ্রামে পরের ম্যাচেও তিনি সুবিধা করতে পারেননি। আউট হন ১৯ বলে ১৩ করে।
তবে ঢাকায় ফিরতেই তার ব্যাটে ফেরে রান। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৬৬ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরার স্বীকৃতি পান। সিলেটের দল সিলেটে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই ব্যাটিং ধসের পর করতে পেরেছিল স্রেফ ৯২ রান। সেদিন শান্ত বিদায় নেন ৯ রানে। পরের ম্যাচে ঘরের মাঠের দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে জয়ের ধারায় ফেরে সিলেট। ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেলে সেই জয়ের নায়ক ছিলেন শান্ত। আবারও তিনি জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টুর্নামেন্টে তার সবচেয়ে খারাপ সময়টা কেটেছে এরপর। টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে (৬, ১৫ ও ৩)। তবে শেষের লড়াইয়ে আবার খুঁজে পান ছন্দ। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সঙ্গে দারুণ শুরুর পর আউট হয়ে যান ২৯ বলে ৩৮ রান করে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আবারও দলকে ভালো শুরু এনে দেন ৩০ বলে ৪০ রান করে। তার দেখিয়ে দেওয়া পথে হেঁটে দারুণ জয়ে ফাইনালে পা রাখে দল।
ফাইনালেও তিনি ভালো খেললেন। তার সঙ্গে পরে জ্বলে উঠলেন মুশফিকুর রহিমও। তবে অন্যদের ব্যর্থতায় যথেষ্ট বড় হলো না স্কোর। পরে ফিল্ডিং আর বোলিংয়ের ব্যর্থতায় জিততে পারল না সিলেট। তবে শান্ত ঠিকই জিতে গেলেন! সেরার স্বীকৃতি পেয়ে তার কণ্ঠে তাই ফুটে উঠল মিশ্র অনুভূতি।
“আমাদের দল খুব ভালো খেলেছে। আজকে দিনটি অবশ্য আমাদের ছিল না। তবে পুরো টুর্নামেন্টে আমরা দারুণ খেলেছি। আমি চেষ্টা করেছি প্রতি ম্যাচে রান করতে ও দলে অবদান রাখতে। সৌভাগ্যবশত এই টুর্নামেন্টে ভালো করতে পেরেছি।”


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ