১৬দিন ধরে চলছে রেশম শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি ও মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার

রেশমের জন্য বিখ্যাত এই নগরীর রেশম শ্রমিকরাই অবহেলিত। লাগাতার ৭ মাসের বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকেরা। প্রতিনিয়ত আন্দোলন করলেও মিলছে না কোনো ফলাফল। রেশম কতৃপর্ক্ষ শোনাচ্ছেন আশার বাণী, প্রকল্প অনুমোদন পেলেও নেই বাস্তবায়ন।

 

 

রাজশাহী রেশম গবেষনা ও প্রশিক্ষন ইস্টিটিউটের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের বিগত ৭ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার ১৬ দিনের মতো চলছে কর্মবিরতি ও মাববন্ধন। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রাজশাহী সদর দপ্তরের মূল ফটক ঘেরাও করে আন্দোলন করেন প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক মজুরিভিত্তিক প্রায় ১৫৭জন শ্রমিক।

 

 

 

 

আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক মনোয়ারা (৪৫) বলেন, আমি দীর্ঘ ১৩ বছর থেকে রেশম বোর্ডে চাকুরী করছি। গত বছরের মাঝামাঝি সময় আমাদের বেতন বন্ধ হয়, যা এখনো চালু হয় নি। আজ থেকে ১৫ দিন আগে আমাদের আন্দোলন শুরু হলেও একের পর এক আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছি কতৃপক্ষ, কিন্তু সমাধান দিতে পারছে না।
আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করতে পারছি না। ঘরে খাবার নাই, দোকানে ধার চাইলে দেয় না। চাল বাকীতে চাইলেও দিতে চায় না। ছেলে মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে আছে। পেটের ক্ষুধার জ্বালায় আন্দোলন করে যাচ্ছি।

 

 

আরেকজন শ্রমিক রবিউল ইসলাম (৪১) জানান, সামনে ৫২ দিন পর রোজা শুরু হবে। রোজার মাসে ছেলে মেয়েকে কি খাবার তুলে দিবো। পড়াশুনাও বন্ধ এখন খাবার বন্ধ করা ছাড়া আর উপায় নাই। বাসায় গেলে ছেলে মেয়েদের দিকে তাকাতে পারি না। বাসা ভাড়া দিতে না পারার জন্য বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে বাসার মালিক। আজ আমরা অসহায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেয় তাহলে হয়তো আমরা বাঁচতে পারবো।

 

 

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ৭ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমাদের বেতন প্রকল্পের উপর না, রাজস্বের উপর আমরা আমাদের বেতন চাই। প্রকল্প প্রকল্প করে আমাদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে যাবো, হয়তে তিনি এর কোনো সমাধান দিতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী রেশম গবেষনা ও প্রশিক্ষন ইস্টিটিউটের ডিজির দপ্তরে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। তবে এ বিষয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে নব-নিযুক্ত সম্প্রসারণ পরিচালক এমদাদুল বারীর সাথে তিনি জানান, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক এসকল কর্মচারীরা প্রকল্পের আওতায় বেতন পান। তাদের বিগত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাদের বেতনও বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টা অমানবিক সেটা আমরাও জানি, সেই জন্য নতুন প্রকল্প চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। দ্রুতই সেটি বাস্তবায়ন হলে তারা বেতন পেয়ে যাবে।

 

 

তিনি আরো জানান, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী মন্ত্রনালয়ে আমরা একটি আবেদন দিয়েছি। যেখানে বলা হয়েছে, এ সকল শ্রমিকদের বেতন ভাতার ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব থেকে অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। এই প্রস্তাবও মন্ত্রনালয় থেকে গৃহিত ও অনুমোদন হয়েছে। তবে এর বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রনালয় ব্যবস্থা গ্রহন গ্রহন করলেই আমরা তাদের বেতন ভাতা দিতে পারবো।
এ নিয়ে ২য় দফায় ১৬দিন থেকে আন্দোলন করছেন রাজশাহী রেশম গবেষনা ও প্রশিক্ষন ইস্টিটিউটের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীরা। তাদের দাবি, দ্রুতই যেন তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে সরকারী রাজস্বের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে বেতন দেয়া হয়। বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনাও দেন তারা।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ | সময়: ১০:২৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine