সর্বশেষ সংবাদ :

বাঘার নীলকুঠি এখন রেশমের বীজাগার

নুরুজ্জামান, বাঘা: নীল চাষের কথা উঠলেই আমাদের মনে পড়ে যায়, সেই ইংরেজ শাসনামলের কথা। যখন কৃষকদের ওপর চলনো হতো নিদারুণ নিপিড়ন আর নির্যাতন। কৃষকরা নীলচাষ করতে না চাইলেও ইংরেজ ব্যবসায়ীরা তাদের বাধ্য করাতেন নীল উৎপাদনের জন্য।
বর্তমানে সেইদিন আর নেই, দেশ আজ স্বাধীন। নীলচাষও আর নেই। কিন্তু সেই নীল চাষের স্মৃতি বিজড়িত জায়গা আজো রয়ে গেছে, আর সেটি হলো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকা। স্থানটি স্থানীয়দের কাছে নীলকুঠি নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে এটি একটি রেশম বীজাগার।
স্থানীয় লোকজন জানান, আমরা এলাকার মুরব্বীদের মুখে শুনেছি, ইংরেজ শাসনামলে মীরগঞ্জ সদরে এ জায়গায় প্রায় একশ বিঘা জমির উপরে নীল প্রস্তুত কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। পরবর্তীতে তা রেশম বীজাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। বর্তমানে এই বীজাগারটির অবস্থা প্রায় রুগ্ন। এ এলাকায় আম চাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষ রেশমের দিকে আর ঝুঁকছেন না। ফলে বীজাগারের উৎপাদন কমে গেছে।
সংশ্লিষ্ঠরা জানান, মীরগঞ্জ রেশম বীজাগারের অবকাঠামো অবিভক্ত (ভারত) ১৯০৫ সালে স্থাপিত। ইংরেজ শাসনামলে এ স্থানে নীলকুঠি তথা নীলের প্রস্তুত কেন্দ্র হিসেবে এটি ব্যবহৃত হতো। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে সরকার ‘বাংলাদেশ রেশম বোর্ড’ গঠন করলে অন্যান্য সকল স্থাপনা সহ নীল কুঠি ভবনটি রেশম বোর্ডের নিয়ন্ত্রনাধীন চলে আসে। এ অঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেশম চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী রোগ মুক্ত রেশম ডিম সরবরাহের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে মীরগঞ্জ রেশম বীজাগার।
স্থানীয় একাধিক সূত্র মতে, আজ থেকে ৮-১০ বছর পূর্বেও মীরগঞ্জ রেশম বীজাগার সারাদেশে রোগমুক্ত রেশম ডিম ও তুঁত চারাসহ পলুপোকা সরবরাহের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আমচাষ লাভজনক হওয়ায় আগের মতো এই এলাকায় আর তুত চারা ও রেশম সুতা সৃষ্টিকারী পলুপোকার চাষ হচ্ছে না।
এখন যেটুকু হচ্ছে তা কেবলই সরকারি ভাবে বীজাগারের জমিতে। এরফলে একদিকে যেমন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান কমেছে, অন্যদিকে হারাতে বসেছে বীজাগারের ঐতিহ্য।
মীরগঞ্জ গ্রামের আব্দুর রহমান ও তোয়াফ আলী জানান, এক সময় তাদের পিতা ও চাচা-সহ এলাকার লোকজন জমিতে তুত চারা উৎপাদন সহ ওই বীজাগার থেকে ডিম এনে পলুপোকার চাষ করতো নিজ বাড়িতে। কিন্তু বর্তমানে আমচাষ সহ অন্যান্য ফসল লাভজনক হওয়ায় তারা কেউই আর পলুপোকার চাষ করেন না। একই কথা বলেন পাশের গ্রামের মিজানুর রহমান।
মীরগঞ্জ বীজাগারের স্থানীয় শ্রমিক মুকুল হোসেন ও আজাদ আলী জানান, আমারা এখানে ৪৯ জন তালিকাভুক্ত শ্রমিক রয়েছি। এরমধ্যে একেক জনের প্রতিমাসে কাজ হয় ৮ থেকে ১০ দিন। মজুরী ৪৫০ টাকা। বাঁকি সময় আমরা অন্যত্র কাজ করে সংসার চালাই।
এ বিষয়ে মীরগঞ্জ রেশম বীজাগারের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আব্দুল মালেক উৎপাদন কমে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এবছর বীজাগারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক থেকে দেড় লক্ষ্য ডিম। যা ৪টি স্কিমে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, এখানে দুই ধরনের কালারে গুড়ি উৎপাদন হয়। হলুদটা দেশী এবং সাদাটা চাইনা।
তিনি জানান, নীলকুঠি দিয়ে এই স্থাপনার সৃষ্টি হয়েছিল সেই নীলগাছ নমুনা হিসেবে এখনো দু-একটি চারা রাখা হয়েছে বীজাগারের চত্বরে। যা দেখতে আসে আজকের প্রজম্ম। তার মতে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আগের মতো পলু পোকার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ