কুসুম্বার প্রত্নাঙ্গনে স্থানান্তর হলো কিংবদন্তির সেই কবর শিরোনা

মান্দা প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় ঐতিহাসিক কুসুম্বা মসজিদে যাতায়াতের রাস্তার ধারে থাকা কালো পাথরের প্রাচীন একটি নিদর্শন স্থানান্তর করা হয়েছে। নিদর্শনটি সুলতান আলাউদ-দীন হোসাইন শাহের কবর ফলক বা শিরোনা হিসেবে পরিচিত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় শনিবার দুপুরে কুসুম্বা মসজিদের উত্তরপাশে তেঁতুলতলায় এটি সরিয়ে নেওয়া হয়।
এসময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা, প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর মহাস্থানগড়ের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা, প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর পাহাড়পুরের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের গবেষণা সহকারী হাসানাত বিন ইসলাম, মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু বাক্কার সিদ্দিক, উপজেলা প্রকৌশলী শাইদুল ইসলাম মিয়া, কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মণ্ডল, কুসুম্বা শাহী মসজিদের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, কালো পাথরের খণ্ডটি প্রাচীন আমলের একটি সাংস্কৃতিক নিদর্শন। এটি সুলতান আলাউদ-দীন হোসাইন শাহের কবর ফলক বা শিরোনা কিনা তা বলা যাচ্ছে না। লিপিটার পাঠোদ্ধার হলেই বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে ‘কুসুম্বা মসজিদ : একটি প্রত্নতাত্তিক সমীক্ষা’ গ্রন্থের লেখক আশরাফুল হক পলাশ কিংবদন্তির বরাত দিয়ে জানান, জনশ্রুতি আছে সুলতান আলাউদ-দীন হোসাইন শাহের স্ত্রী কুসুম বিবি সেই সময় মান্দার কুসুম্বাতে অবস্থান করতেন। সেই সুবাদে শেষ বয়সে সুলতান কুসুম্বায় স্ত্রীর কাছে অবস্থান করাও বিচিত্র নয়। তাঁর সমীক্ষা গ্রন্থের তথ্য সন্ধানের সূত্র ধরে তিনি এও জানান, সুলতান আলাউদ-দীন হোসাইন শাহ মৃত্যুর সময় কোথায় অবস্থান করছিলেন কষ্টে মেলে এমন কোন ইতিহাস গ্রন্থেও তার উল্লেখ নেই। এ কারণে তিনি কুসুম্বাতে সমাহিত রয়েছেন এমন দাবী যুক্তিহীন হয়ে পড়ে না।
বিশেষ করে ২০১১ সালে প্রকাশিত ‘কুসুম্বা মসজিদ : একটি প্রত্নতাত্তিক সমীক্ষা গ্রন্থটিতে লেখক আশরাফুল হক পলাশ ইতিহাস অনুসন্ধানে কিছু দাবী উত্থাপন করেছেন তা উপেক্ষা করে অদ্যাবধি নতুন কোন দাবী উত্থাপন হয়নি। যতদিন তা না হবে, ততদিন এসব দাবীই ঐতিহাসিক বলে বিবেচিত হবে ইতিহাসের নিয়মে।
অন্যদিকে প্রাচীন এ নিদর্শনের গায়ে লেখা অংশের একটি পাঠোদ্ধার পাওয়া যায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ইমরুল কায়েস চৌধুরী ‘কালান্তরে নওগাঁ’ গ্রন্থে। তৎকালিন নওগাঁ জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। পাঠ অনুবাদে প্রস্তরটিতে বাদশাহ হোসাইন শাহের নাম উল্লেখ রয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে ‘কুসুম্বা মসজিদ : একটি প্রত্নতাত্তিক সমীক্ষা’ গ্রন্থেও।
স্থানীয় বিশেষ ব্যক্তিরা আশা করছেন, বিষয়টি ইতিহাস গবেষকদের দৃষ্টি কাড়বে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ | সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ