মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা: বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। এটি এমন একটি ফল, যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যে কোনো অবস্থাতেই খাওয়ার যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, পুষ্টির দিক থেকে প্রায় ১০ প্রকার উপকারিতা রয়েছে এই ফলে। এ কারণে দেশের গন্ডি পেরিয়ে এবার স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আমের পর পেয়ারার ও বরই রপ্তানি শরু হয়েছে বিদেশে।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে বাঘার আম রপ্তানি হচ্ছে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল এবং ফ্রান্স সহ রাশিয়াতে। সম্পুর্ণ ফরমালিন ও কেমিক্যাল মুক্ত এই আম ইতোমধ্যে বাঘার সুনাম বয়ে এনেছে। আমের পর এবার রপ্তানি শুরু হয়েছে পেয়ারা ও বরই। আর এটি সম্ভব হয়েছে স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের একান্ত প্রচেষ্টায়।
সবশেষ হত সোমবার এ উপজেলা থেকে ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সফল শিক্ষিত কৃষক শফিকুল ইসলাম সানা ৫শ’ কেজি পেয়ারা রপ্তানি করেন ইটালিতে। এর পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঐ একই কম্পানীর মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে রপ্তানি হয় দেড়’শ কেজি করে মোট তিন’শ কেজি থাই বরই।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। তারমধ্যে কুল বা বরই হচ্ছে বাংলাদেশে অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি এই কুল চাষ হয়ে থাকে।
তবে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, সাতখিরা, বগুড়া, যশহর, চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে ভালো এবং উন্নতজাতের কুল বা বরই চাষ হয়। এদিক থেকে স্বাদে গুনে ভরপুর বাঘার কুল বরই। এ উপজেলা থেকে আমের পর এবার দেশের বাইরে রপ্তানি শুরু হয়েছে পেয়ারা ও কুল বরই।
বাঘার সফল ফল চাষী শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, এ উপজেলার মাটি যে কোন ফসল চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। আম এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারি ফসল। আমের পরে পেয়ারা ও বরই চাষ করে আমরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি।
তার মতে, বরই দিয়ে চাটনি, আচার ও নানান ধরণের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। কুল বা বরই খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই ছোট বড় সবার কাছেই এই ফলটি ভিষন প্রিয়। বর্তমানে দেশের অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কুল চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এর মধ্যে আপেল কুল, বাউ কুল, নারকেল কুল, থাই কুল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বরইয়ের ভিতরে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান আছে যা অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর ভেতরে সলেবুল ফাইবার এবং ভিটামিন সি.এ এবং বি ২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা হজম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
তিনি বলেন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাটির নিচে থাকা খনিজ সম্পদ সেইদেশের অর্থনৈতিক চিত্র পুরোপুরি বদলে দেয়, কিন্তু আমাদের দেশে খনিজ সম্পদ নেই। তবে আমাদের দেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। শুধু প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ।
এ ক্ষেত্রে কৃষি খাতে শিক্ষিত যুবক তথা তরুণরা এগিয়ে এলে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তিনি তরুণ বেকার যুবকদের কৃষিতে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ ভাবে আহবান জানান।