সর্বশেষ সংবাদ :

বিএমডিএর ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পিডি হতে দৌড়ঝাঁপ

স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন প্রকল্পের (বিএমডিএ) নতুন ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক হতে ব্যাপক তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। যাদের হাতে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও কোনটি কাজে আসেনি। তারায় নতুন করে পিডি হওয়ার দৌড শুরু করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম, আবদুল লতিফ ও মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হারুন-অর-রশিদ। তাদের পক্ষে আছে রাজনৈতিক তদবিরও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী বিভাগের তিন জেলার আট উপজেলায় সেচকাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়াতে ‘বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ-২য় পর্যায়’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। গত বছর ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এর পরই এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।
বিএমডিএ সূত্র জানায়, নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হারুন-অর-রশিদ আগে কোনো প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেননি। ষষ্ঠ গ্রেডের এই কর্মকর্তা রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকাকালে মিঠাপুকুরে ক্রসড্যাম নির্মাণ করেন। তবে এতে ত্রুটি ধরা পড়ায় সেটি কাজে আসছে না। নওগাঁ-২-এ বদলি হওয়ার পরও তিনি নানাভাবে তদবির করছেন ক্রসড্যামের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে। এখন নতুন প্রকল্পের পরিচালক হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনি।
জানা গেছে, উত্তরের ৯ জেলায় ২০১৪-১৮ মেয়াদের প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর পবা জোহাখালী খালটি খনন করা হয়। ৩ দশমিক ১৪৭ কিলোমিটার খালটি খননে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। খাল খনন করার পর মাটি ফেলা হয় খালপারেই। আবার যে পরিমাণ গভীর করার কথা বলা হয়, সেটিও করা হয় নি। ফলে বছর না যেতেই ভরাট হয়ে যায় খালগুলো। এতে খরা মৌসুমে কোনো কাজে আসে না খনন করা খালগুলো। দুই বছর আগে রাজশাহীর কাটাখালী খালটি খনন করা হয়েছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে।
সেই খালে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও হাঁটুসমান পানিও নেই। যে মাটি কেটে খালপারে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো আবার খালে নেমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে কোথাও সামান্য পানি, তো কোথাও শুকনো। পবার হরিয়াণ বিলের কৃষকদের জন্য এ খাল খনন করলেও তা কাজে আসছে না। বাধ্য হয়ে কৃষকরা শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
রাজশাহীর বাঘায় একই প্রকল্পের আওতায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল খাল খননে। সেসব খালেও খরার সময় পানি থাকে না বলে জানান আশপাশের বাসিন্দারা। এ ছাড়া ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর চারঘাট থেকে পুঠিয়া পর্যন্ত বড়াল খাল (নদী) খননের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। এ খালটিতেও খরার সময় পানি থাকে না। চারঘাটের বড়াল খালটি প্রস্থে ১৫ মিটার ও গভীরতায় পাঁচ-ছয় মিটার করার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। আর খনন করা মাটিগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের পরপরই খালে চলে যায়। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম। তিনিও দৌড়ঝাঁপ করছেন নতুন প্রকল্পের পরিচালক হতে।
কৃষকদের সেচসুবিধার জন্য ২০১৭ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলবায়ু ট্রান্সপ্লান্ট প্রকল্পের আওতায় মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরী থেকে শুরু করে সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের প্রদাপদহ থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন হয়ে নলমাড়া খাল পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়। কৃষকরা জানান, এর মধ্যে সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের প্রদাপদহ থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের শিমুলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল খননে অব্যবস্থাপনা আছে। কোথাও কোথাও খাল খনন করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও খননের নামে মাটি শুধু উঁচু করে রাখা হয়েছে। এতে খালের মুখগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁসাইগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য ২০১৭ সালের শেষের দিকে খালটি খনন করা হয়। খালটি খননের সময় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ১০ কিলোমিটার খাল খননে অর্ধেকই সঠিকভাবে খনন করা হয়নি। এ প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলী। অবশ্য সমশের আলী বলেন, ৫ কিলোমিটার খাল খননে অনিয়মের কথা সঠিক নয়। কারণ কোনো খননের পাঁচ থেকে সাত বছর পর এমনিতেই তা ভরাট হয়ে যায়। তিনিও নতুন প্রকল্পের পরিচালক হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অবশ্য এমন কথা অস্বীকার করেছেন সমশের আলী।
এ ছাড়া ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক হতে দৌড়ে আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ও মাহফুজুর রহমান। যদিও তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তবে বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানান, নতুন এই প্রকল্পটি যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সে জন্য একজন যোগ্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। অতীতে প্রকল্প পরিচালক হয়ে কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারেননি বা নিম্নমানের কাজ করেছেন এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ