১৫ লাখ টাকা আয় করার সম্ভাবনা মৌচাষি মনিরুল ইসলামের

গোমস্তাপুর প্রতিনিধিঃ

কলকাতার একটি টিভি চ্যানেল ‘দুর-দর্শন’ এ মৌমাছি চাষের পদ্ধতি,প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া দেখে ২০১০ সালে মৌমাছি চাষে আগ্রহী হয় এক উদ্যোক্তা। প্রথমে ১৩ টি মৌ বক্স নিয়ে মৌমাছি চাষ করতে শুরু করে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সে এখন মাসে খরচ বাবদ আয় করে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় তার পদাচরণ রয়েছে। এ গল্পগুলো শুনাচ্ছিলেন ‘মমতা মৌ ভান্ডারের’ উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে।

 

মৌ উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলামের খামারে সরেজমিনে গিয়ে মৌমাছি চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার সরিষার বাম্পার ফলনে আমার কপাল খুলে গেছে। এখন ২০০টির বেশি মৌ বক্স নিয়ে মৌমাছি চাষ করছি। এবার সরিষা থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি। এখন আমার খামারে ৭জন কাজ করছে। সামনে আরো মৌ বক্স বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিমাসে ৩০-৪৫ মণ মন মধু সংগ্রহ করতে পারছি। যা ১২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করি। এখন পর্যন্ত ৯০ মণের উপরে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করেছি। সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করার পরে মাদারীপুর জেলা গিয়ে ধনিয়া ও কালোজিরা থেকে মধু সংগ্রহ করবো। তারপর মার্চ মাস থেকে লিচুর মধু সংগ্রহ করার জন্য নাটোর ও দিনাজপুরে থাকবো। বছরের সব চাইতে লিচু থেকে মধু সংগ্রহ বেশী করে থাকি। আনুমানিক ১০০ মণের উপরে।

 

 

 

তিনি আরও বলেন, মৌমাছি থেকে কেবলমাত্র আমরা মধু সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু এই থেকে আরো চারটি গুরুত্বপুর্ণ জিনিস পাওয়া যায়, মৌমাছির বিষ, রয়েল জেলি,প্রোপালেস ও পোলেন। কিš‘ এগুলো বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক মুনাফা হারাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি কৃষি মন্ত্রণালয়,খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটু উদ্দোগ নেয়। তাহলে মৌ উদ্যোক্তারা যেমন লাভবান হবে। তেমনী সরকারও অধিক মুনাফা পাবে। পোশাক শিল্প যেমন একটি দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। তেমনী মৌমাছিও অবদান রাখবে। আর সরকারকে অনুরোধ জানাই বাইরের দেশ থেকে মধু আমদানি না করে নিজের দেশের মৌ চাষীদের মাধ্যমে মধু নেয়ার।

 

মৌমাছি চাষ করে মধু সংগ্রহকালে কথা হয় রিয়াদ ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন,মৌমাছি চাষ করা একটা লাভজনক পেশা। আমি চার বছর যাবৎ এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছি। বছরে খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা আয় করে থাকি। এ থেকে আমাকে আর কোন কাজ করা লাগে না। আল্লাহর রহমতে খুব সুখে-শান্তিতে আমার সংসার চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি মুনাফাও জমাতে পারছি। উদ্যোক্ত মনিরুল ইসলামের সাথে চার বছর ধরে এই পেশায় নিয়োজিত শফিকুল ইসলামের সাথে আলাপকালে বলেন, গত চার বছর আগে মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে মনিরুল ভাইয়ের সাথে মৌমাছি চাষ করতে লাগি। এখন পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত আছি। মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারছি। এ কাজ করে আমি ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা জমিয়েছি। যা দিয়ে এখন বাড়ির কাজ আরম্ভ করেছি।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার এই প্রতিবেদককে জানান,এই উপজেলায় বানিজ্যিকভাবে মনিরুল ইসলাম কেবলমাত্র মৌ বক্সের মাধ্যমে মৌমাছি চাষ করে থাকে। তাকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রনোদনা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত তাকে উন্নতমানের ৩০ টি মৌ বক্স, মধু নিস্কাশনের যন্ত্র,রিফেক্টো মিটার (মধুর আদ্রর্তা পরিমাপক যন্ত্র),স্কুফুকার(ধোঁয়া দেয়া মেশি), ৬ বিঘা সরিষার প্রদর্শনী ও ২ বিঘা আখের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। রয়েল জেলি,প্রোপালেস ও পোলেন সংগ্রহের জন্য আপনারা কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন কী না? এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন,এই পদ্ধতিগুলো খুব ব্যয়বহুল। সহজে এগুলো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়না। তবে মৌ উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।

 

 

 

 

 

সানশাইন/টিএ


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ | সময়: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine