জিদানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ক্ষমা চাইলেন লু গ্রেত

স্পোর্টস ডেস্ক: জিনেদিন জিদানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর থেকে ধেয়ে আসছিল সমালোচনার তীর। খেলোয়াড়, ক্রীড়ামন্ত্রী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকের তোপের মুখে পড়েছিলেন নোয়েল লু গ্রেত। পরিস্থিতির উত্তাপ বুঝতে পেরে দ্রুতই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্ষমা প্রার্থনা করে লু গ্রেত বলেন, জিদানকে নিয়ে তার ভাবনা ঠিকঠাক প্রতিফলিত হয়নি ওই মন্তব্যে। নিজের ‘আনাড়ি’ মন্তব্যের কারণে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে বলেও জানান তিনি। “ওই মন্তব্যগুলোর জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সেখানে যথাযথভাবে আমার ভাবনা প্রতিফলিত হয়নি, কিংবা একজন খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, তা নিয়ে আমার মূল্যায়ানও উঠে আসেনি।”
মূলত ফ্রান্স ফুটবল দলের কোচ হিসেবে দিদিয়ে দেশমের মেয়াদ বাড়ানো থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। দলকে টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যাওয়া এই কোচের চুক্তি ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাড়ায় ফেডারেশন। যদিও এবার জিদান দায়িত্ব পেতে পারেন বলে জোর আলোচনা ছিল। ফ্রান্সের এই কিংবদন্তি এখন ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব পেতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। ফ্রান্সের আরএমসি রেডিওতে সাক্ষাৎকারে লু গ্রেতকে এই প্রসঙ্গেই জিজ্ঞেস করা হয়, জিদান যদি এখন ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে নেন? এতেই বেশ চটে গিয়ে লম্বা উত্তর দেন তিনি।
“আমার তাতে মাথাব্যথা নেই। তার যেখানে ইচ্ছা সে যেতে পারে। আমি খুব ভালো করেই জানি যে, জিদান সবসময়ই রাডারে ছিল (ফ্রান্সের সম্ভাব্য কোচ হিসেবে)। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরও অভাব নেই। কেউ কেউ তো দেশমের বিদায়ের অপেক্ষায় ছিলৃ কিন্তু দেশমকে নিয়ে গুরুতর আপত্তি কার থাকতে পারে? কারও নয়।”
“জিদানের যা ইচ্ছা করতে পারে। আমি পরোয়া করি না। তার সঙ্গে আমার কখনও দেখা হয়নি। দেশমের দায়িত্ব ছিন্ন করার কথা আমরা কখনও ভাবিইনি। জিদান যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে, কোনো ক্লাবে বা যে কোনো জায়গায়।” জিদানের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নে লু গ্রেতের উত্তর বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলে দেয়।
“জিদান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল কি না? অবশ্যই নয়। চেষ্টা করলেও আমি তার ফোন ধরতাম না।” লু গ্রেতের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পরই তুমুল হইচই শুরু হয় ফ্রান্সে। এই মুহূর্তে ফ্রান্স ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা এমবাপে টুইটারে লিখেন, “জিদানই ফ্রান্স। তার মতো একজন কিংবদন্তিকে আমরা এভাবে অসম্মান করতে পারি না।”
বছর দুয়েক আগেও জিদানকে ফ্রান্সের কোচ হিসেবে পেতে দারুণ আগ্রহী ছিলেন লু গ্রেত। তবে জিদান তখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন। ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ ও ২০০০ ইউরো জয়ের নায়ক জিদান। ২০০৬ বিশ্বকাপে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সেই আরেকটি শিরোপা জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিল ফ্রান্স। দেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন তিনি। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কোচিংয়েও তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। তার কোচিংয়ে রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে দুটি লা লিগা। ইতিহাসের একমাত্র কোচ হিসেবে তিনি জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা।
এমন একজন জাতীয় আইকনকে নিয়ে এরকম মন্তব্য মানতেই পারছেন না ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী ও সাবেক টেনিস খেলোয়াড় আমিলি ইউদেহা-কাস্তেহা। “দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া সংস্থাটি নিশ্চিতভাবেই সীমা ছাড়িয়ে গেছে এখানে। খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য এটি এবং শ্রদ্ধাবোধের লজ্জাজনক ঘাটতি ফুটে উঠেছে এখানে। ফুটবল ও ক্রীড়ার একজন কিংবদন্তিকে নিয়ে এই মন্তব্য আমাদের সবাইকে আঘাত করেছে।”
লু গ্রেতকে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানান ফরাসি রাজনীতিবিদ পিয়ের আলেকসঁদ অঁগলাদে। দেশের ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে আরও উপযুক্ত কাউকে দেখতে চান তিনি। “ফ্রান্সের ফুটবল ও ক্রীড়ার স্তম্ভ জিদান। তিনি এমন একজন ব্যক্তিত্ব যাকে দেশের সব মানুষ দারুণ ভালোভাবে। আমাদের ফুটবলে প্রয়োজন আরও ভালো কাউকে।”


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৩ | সময়: ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ