গোমস্তাপুরে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন

গোমস্তাপুর প্রতিনিধিঃ

 

 

মিষ্টি কুমড়া আমাদের দেশে বেশ পরিচিত একটি সবজি। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, আবার খেতেও খুব সুস্বাদু। এটি কাঁচা অথবা পাকা দুই অবস্থায় খাওয়া যায়। চলতি বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে মিষ্টি কুমড়ার ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলায় ২৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ হয়েছে। সুইটি ও বারি মিষ্টি কুমড়া-১ এই দু’জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে।

 

 

 

বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকার মিষ্টি কুমড়া চাষী কালাম আলী জানান, এ বছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় আর বীজ ভালো পাওয়াতে মিষ্টি কুমড়ার ফলনও ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মন করে হচ্ছে। আমি অন্যের জমির মিষ্টি কুমড়া কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারের কাছে বিক্রি করি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন: ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর, ঢাকা, ফেনী ও চট্টগ্রাম থেকে এসে ট্রাকে করে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আগে ১২’শ টাকা মন করে বিক্রি করেছি। এখন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকার মত মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি। ওই ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষী মার্শাল আলী বলেন, এ বছর আমি ৪৮ বিঘার বেশি জমিতে মিষ্টি কুমড়া লাগিয়েছি। কাটিমণ আম বাগানের মধ্যে এ কুমড়াগুলো লাগিয়েছি। আগের বছরের থেকে এ বছর প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। পাঁচ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ঠিকায় (খাড়াতে) ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আগের বছরগুলোতে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ মণ মতো মিষ্টি কুমড়া হতো। কিন্তু এ বছর এক বিঘা জমিতে ৮০ মণ পর্যন্ত হচ্ছে। বর্তমানে ৬৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। কিছুদিন আগে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।

 

 

 

আরো এক মিষ্টি কুমড়া চাষী মজলু আলী বলেন, ভাদ্র মাসের শেষের দিকে মিষ্টি কুমড়া লাগিয়ে অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফলন পেতে শুরু করেছি। এক বিঘা জমিতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা মত খরচ হয়। আর বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। মিষ্টি কুমড়া চাষে খরচের পাশাপাশি শ্রমিক ও কম লাগে। তিন থেকে চার বার মতো পানি, সার ও কীটনাশকের স্প্রে দিলেই মিষ্টি কুমড়া হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন আমার ২৭ কাঠা জমিতে ১০৬ মন মিষ্টি কুমড়ার ফলন পেয়েছি। খরচ বাদে ৬২ হাজার টাকা টিকেছে। আমার জমিতে গোবর দিয়ে লাগিয়ে একবার সার, তিন থেকে চার বার কীটনাশক স্প্রে ও সাতবার পানি দিয়েছি। নরোশিয়া এলাকার রাস্তার ধারের এক চা বিক্রেতা কালু আলী জানান, আমের বাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করে অনেকেই এখন লাখোপতি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। আমার দোকানের পাশ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মিষ্টি কুমড়া নিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।

 

 

 

 

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সরকার জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর মিষ্টি কুমড়ার চাষের পরিমাণ বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ২৭ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে আম বাগানে ৭ হেক্টর ও বিভিন্ন জমিতে ২০ হেক্টর। যা গত বছর ছিল ১৮ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছিল ৩৯৬ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, এখানে কৃষকরা একই জমিতে একাধিক ফসল করে বেশ লাভবান হচ্ছে। আমের বাগানে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে কৃষক প্রচুর পরিমাণে মুনাফা পাচ্ছে। এতে করে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছে ঠিক তেমনি ভোক্তারাও সবজির চাহিদা মেটাতে পারছে।

 

 

 

 

 

সানশাইন/টিএ


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ | সময়: ৯:০০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine