সর্বশেষ সংবাদ :

মান্দায় ড্রাম চিমনির ভাটায় পুড়ছে কাঠ, প্রশাসন নিরব

মান্দা প্রতিনিধিঃ

 

নওগাঁর মান্দায় সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে একটি ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় ইট পোড়ানোর মৌসুমে ড্রাম চিমনি দিয়ে বের হচ্ছে প্রচুর বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে আশপাশের ফসলি জমিসহ ফলদ গাছপালার উৎপাদন।

 

 

এছাড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি ভাটায় পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ চিমনি থাকলেও কয়লা পরিবর্তে সেগুলোতেও পুড়ছে কাঠ। এসব ভাটামালিকেরা বলছেন, কয়লার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে গিয়ে বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই কাঠ পোড়াতে হচ্ছে ।
স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, মান্দা সদর ইউনিয়নে সাহাপুর এলাকায় ফসলি জমি ও বাগানের ধারে মতিন ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়। শুরুতে আধুনিক পরিবেশবান্ধব জিগজ্যাগ চিমনি ব্যবহার করে ইট পোড়ানো হচ্ছিল। এবছর সেই জিগজ্যাগ চিমনির পরিবর্তে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

 

 

সরেজমিনে মতিন ব্রিকস নামে সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনির ওই ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ভ্যানগাড়িতে ভরে কাঠ এনে ভাটার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে স্তুপ করে রাখছেন। এরপর ওজন করে সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভাটার চারপাশে। এভাবে ইট পোড়ানোর জন্য ভাটাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ কাঠ মজুত করা হয়েছে। এসময় ভাটামালিকসহ দায়িত্বরত কাউকে পাওয়া যায়নি। উপজেলার সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসীন রেজা বলেন, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ বাগান ও জনবসতি এলাকায় মতিন ব্রিকস নামের ভাটা স্থাপন করে দীর্ঘদিন ইট পোড়ানোর কাজ করছেন মেহেদী হাসান। এটি সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনির ভাটা। ইট পোড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফল আসছে না আম, লিচুসহ অন্যান্য গাছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

 

 

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকায় হিরো ব্রিকস ও কেবিএফ ব্রিকস, বিজয়পুর এলাকায় সাদিক ব্রিকস, সাহাপুর এলাকায় মতিন ব্রিকস, নীলকুঠি এলাকায় ভাইভাই ব্রিকস, ভোলাগাড়ী এলাকায় সালেহা ব্রিকস, ভরট্ট কাঠেরডাঙ্গা এলাকায় মিলন ব্রিকস, মৈনম এলাকায় এমবিসি ব্রিকস, চকগৌরী এলাকায় সজল ব্রিকস নামের ভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে  জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। উপজেলার বিজয়পুর এলাকার সাদিক ব্রিকসের মালিক রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কয়লার দাম অনেক বেড়ে গেছে। উপজেলার কয়েকটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে । তাদের দেখাদেখি আমিও কাঠ পুড়াচ্ছি।’
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব চিমনি ব্যবহারসহ কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছি। অন্যদিকে উপজেলার বেশ কয়েকটি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে । প্রশাসনকে বিষয়টি জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।’ এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, লাইসেন্স ছাড়াই উপজেলার ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত আছে। ড্রাম চিমনির ভাটাসহ কয়লার পরিবর্তে যেসব ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে খুব শিগগিরই সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

 

 

সানমাইন/টিএ

 


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ | সময়: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine