অব্যাহত শীতে যবুথবু রাজশাহীর মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার : কনকনে শীত সপ্তাহজুড়ে কাপছে উত্তরের জনপদ। রাত ও দিনভর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকছে আকাশ। দুপুরের পর দেখা মিলছে সূর্যের, তবে তাপ ছড়াতে পারছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় যবুথবু অবস্থা মানুষের।
পুরো সপ্তাহ জুড়ে রাজশাহীতে বিরাজ করছে এই অবস্থা। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ। সরকারিভাবে কিছু কম্বল বিতরণ করা হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে নেই। সরকারি কম্বলও জনসংখ্যার তুলনায় খুবই সামান্য।
রাজশাহীতে জানুয়ারির প্রথম থেকেই তীতল হাওয়া বইছে। সর্বশেষ শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্র্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন তাপমাত্রা ছিলো ১০ ডিগ্রি। তাপমাত্রা আগামী দু-একদিনে আরও কমবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী মহানগরীর বড়বনগ্রাম এলাকার রিকশাচালক আব্দুল হামিদ বলেন, কয়েক দিনের শীতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। ফলে রিকশার যাত্রী কমে গেছে। তাছাড়া কনকনে ঠান্ডায় প্রতিদিন চালাতেও মন চায় না। এতে আয় রোজগার কমে গেছে। টাকার অভাবে খাবার ও শীতবস্ত্র কিনতে পারছি না।
পবা উপজেলার ভালাম এলাকার দিনমজুর আব্দুস সালাম বলেন, আমরা মাঠে কাজ করি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত শীতের কারণে কাজ করতে পারছি না। শীতবস্ত্র না থাকায় পরিবারের শিশুরা খুব কষ্টে আছে।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এসব শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, নভেম্বরেই মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীতে ৫৬ হাজার ৮৫০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। এগুলো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড, ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৩টি পৌরসভায় বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে বড়াইগ্রাম: বড়াইগ্রামে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হাড় কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ।
শীত থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালিয়ে শরীর উষ্ণ রাখার চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ। প্রচণ্ড শীতে স্বাভাবিক চলাফেরাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও।
সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। এছাড়া প্রচন্ড কুয়াশার কারণে ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, প্রচন্ড শীতে হতদরিদ্র মানুষেরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটালেও জনপ্রতিনিধিদের সেভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এবার বনপাড়া ও বড়াইগ্রাম পৌরসভায় ৪শটি করে এবং ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ২৭৫টি করে মোট দুই হাজার ৭২৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু এতে এ উপজেলার হতদরিদ্র ও দুস্থদের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মানুষেরও শীতবস্ত্রের চাহিদা মেটেনি। স্থানীয়ভাবেও কোন জনপ্রতিনিধিকে দুস্থ মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড শীত ও কুয়াশার কারণে জনজীবন অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন পর শুক্রবার দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। কুয়াশার কারণে ভোর থেকে সকাল দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত এবং যানবাহনগুলো লাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে চলছে।
স্বল্প আয়ের মানুষ কাজে যেতে পারছেন না শীতের কারণে। বিভিন্ন স্থানে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পোশাকের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষরা ছুটছেন ফুটপাতে।
বনপাড়া পৌর গেট ও বড়াইগ্রাম পৌর মার্কেটের সামনে বসেছে পুরনো কাপড়ের পসরাও। শীতে হতদরিদ্র মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুসহ পশুপাখিরাও দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
প্রচন্ড শীতে শিশু ও বয়স্করা নিউমোনিয়া, স্বর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারী ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।
চন্ডিপুর গ্রামের ভিক্ষুক আসমা বেগম বলেন, ‘শীতি জইমি যাচ্ছি, কিন্তু মিম্বার-চিয়ারম্যান কেউ একটা কম্বল দিলি না। বিয়েন (ভোর) বেলা মিয়ের গায়ের চাদরডা খুইলি লিয়ে ভিক্ষি করতে বাড়াইচি। একখান কম্বল পালি গায়ে জড়ায়ে ইট্টু আরামে থাকতি পারতাম, কিন্তু আমাক কিডা দিবি বাবা’।
উপজেলার মামুদপুর গ্রামের রিকশাচালক আবু রায়হান বলেন, তীব্র শীতে ঘর থেকে বের হতেই পারছি না। দুপুরের দিকে একটু রিক্সা নিয়ে বের হলেও সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘরে ফিরে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া তীব্র শীতের কারণে রাস্তায় মানুষজনও খুব কম। গাড়ি নিয়ে বের হলেও ভাড়া হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খুরশিদ আলম জানান, হিমেল বাতাসের সাথে শৈত্যপ্রবাহের কারণে শ্বাসকষ্ট, স্বর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্তের হার বেশি। প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাসহ আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৩ | সময়: ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ