সর্বশেষ সংবাদ :

কেয়ারির সেঞ্চুরি আর গ্রিনের লড়াইয়ে রান পাহাড়ে অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক: বাবর আজমের মতো অনিয়মিত বোলারের বলে আউট হতে কোন ব্যাটসম্যানের ভালো লাগে? সেটিও যদি হয় নীরিহ এক ডেলিভারিতে ও ৯৩ রানে থাকা অবস্থায়! গত মার্চে করাচিতে সেই তেতো অভিজ্ঞতাই হয়েছিল অ্যালেক্স কেয়ারির। সেঞ্চুরিটা মিলিয়ে গিয়েছিল হাতছানি দিয়েও। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ এবার পেলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। তাতে কেটে গেল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের একটি খরাও।
কেয়ারির শতরানের পথে দারুণভাবে সঙ্গ দিলেন ক্যামেরন গ্রিন। ভাঙা আঙুল নিয়েও এই অলরাউন্ডার উপহার দিলেন হার না মানা লড়িয়ে ফিফটি। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ঘোষণা করল ৭ উইকেটে ৫৭৫ রান নিয়ে। বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই শুরুতে বড় ধাক্কা দক্ষিণ আফ্রিকার। অধিনায়ক ডিন এলগার আউট শূন্য রানেই। বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের খেলা আগেই শেষ হওয়ার সময় তাদের রান ১ উইকেটে ১৫। ইনিংস পরাজয় এড়াতেই তাদের প্রয়োজন আরও ৩৭১ রান।
আগের দিন ডেভিড ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি ও স্টিভেন স্মিথের ৮৫ রানের ইনিংসের পর তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার নায়ক কেয়ারি। দিনের শুরুতে দ্রুত তিনটি উইকেট হারালেও পাল্টা আক্রমণে তিনি খেলেন ১৪৯ বলে ১১১ রানের ইনিংস। তাতে ৯ বছর পর টেস্টে তিন অঙ্কের দেখা পেলেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো কিপার-ব্যাটসম্যান। সবশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অ্যাডিলেইডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্র্যাড হাডিন। এরপর হাডিন নিজে খেলেছেন আরও ১৫ টেস্ট, ফিল নেভিল খেলেছেন ১৭ টেস্ট, ম্যাথু ওয়েড ১০টি ও টিম পেইন ৩১টি। এই টেস্টের আগে কেয়ারি খেলেছেন ১৩ টেস্ট। দীর্ঘ এই সময়ে তিন অঙ্কের স্বাদ পাননি কেউ। এবার কেয়ারির হাত ধরেই অবসান সেই অপেক্ষার।
দিনের শুরুটা ছিল নাটকীয়। ৪৮ রানে দিন শুরু করা ট্রাভিস হেড ৫৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন দিনের তৃতীয় ওভারে। পরের দুই বলেই আনরিখ নরকিয়ার দুটি গোলায় শিকার দুটি বড় উইকেট। ভাঙা আঙুল নিয়েও ফিফটি করেন ক্যামেরন গ্রিন, শতরানের জুটি গড়েন অ্যালেক্স কেয়ারির সঙ্গে।
ফিফটির পরের বলেই গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হেড। তার জায়গায় ক্রিজে যান ডেভিড ওয়ার্নার। শততম টেস্টে আগের দিন ডাবল সেঞ্চুরিতে রাঙানোর পর পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া ওপেনার নতুন দিনে শুরু করেন নতুন করে। কিন্তু সেই চেষ্টা শেষ প্রথম বলেই। ১৪৭ কিলোমিটার গতির ইয়র্কারে তার বেলস উড়িয়ে দেন নরকিয়া।
প্যাট কামিন্স গিয়ে হ্যাটট্রিক ডেলিভারি থামান কোনোরকমে। কিন্তু পরের ওভারে তিনি ফেরেন কাগিসো রাবাদার বলে। ৫ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া হারায় ৩ উইকেট। তবে বড় লিড তো হয়ে গেছে আগেই। শঙ্কারও বেশি কিছু ছিল না। কেয়ারি ও ন্যাথান লায়ন শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। তাতে সরে যায় ওই সাময়িক চাপ। লায়ন আউট হন ১৭ বলে ২৫ রান করে।
দর্শকের তুমুল করতালিতে এরপর ক্রিজে যান গ্রিন। আগের দিন নরকিয়ার ডেলিভারি হাতে লাগার পর তিনি মাঠ ছেড়েছিলেন রক্তাক্ত আঙুল নিয়ে। স্ক্যান করে ধরা পড়ে ডানহাতের তর্জনিতে চিড়। এই টেস্টে আর বোলিং করতে পারবেন না তিনি, ছিটকে গেছেন পরের টেস্ট থেকেও। তার পরও কেয়ারিকে সঙ্গ দিতে নেমে যান ওই চোট নিয়েই। নিজের কাজটাও করেন তিনি ঠিকঠাক। ১৩৩ বলে আসে তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। গ্রিনের সঙ্গে জুটির শতরানও এর পরপরই।
কেয়ারির পথচলা থামে ইয়ানসেনের শর্ট বলে। বাঁহাতি এই পেসারের পরের ওভারেই বাউন্ডারি মেরে গ্রিন ফিফটি করেন ১৭০ বলে। গত কয়েকটি টেস্টে ব্যাট হাতে ভালো করতে পারছিলেন না তিনি। এই টেস্টে বল হাতে ৫ উইকেটের পর এবার রানেও ফিরলেন ভাঙা আঙুল নিয়ে। একটু পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেন প্যাট কামিন্স। চা-বিরতি হয় তখনই।
এরপর আবার শুরু দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের লড়াই। ম্যাচের প্রথম দিনে ফিল্ডিংয়ের সময় বাঁহাতের মধ্যমায় চোট পাওয়া মিচেল স্টার্ক বল হাতে আক্রমণ শুরু করেন ওই চোট নিয়েই। রক্ত ঝরে লাল হয়ে ওঠে তার ট্রাউজার, তবু বোলিং করে যান।
আরেকপ্রান্তে গতি, সুইং আর বাউন্স দিয়ে প্রোটিয়া টপ অর্ডারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন প্যাট কামিন্স। তিন ওভার বোলিং করেন রান দেননি অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। এর মধ্যে ফিরিয়ে দেন এলগারকে। লেগ স্টাম্পে থাকা ডেলিভারিতে গ্লাভস ছুঁইয়ে কিপারের কাছে ধরা পড়েন প্রোটিয়া অধিনায়ক।
আপাতদৃষ্টিতে ভালো ডেলিভারি মনে না হলেও এলগারের জন্য এটিই কার্যকর। সিরিজে দ্বিতীয়বার তিনি আউট হলেন এভাবে। টেস্ট ক্যারিয়ারে তার মোট শূন্য এখন ১৩টি। কামিন্স উইকেট পেতে পারতেন আরও একটি। টিয়ারনিস ডে ব্রেইনের ব্যাটে ছোবল দিয়ে আসা বল প্রথম স্লিপে ওয়ার্নার মুঠোয় নিলেও পরে ফসকে যায়। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের স্বস্তি দিয়ে বৃষ্টি নেমে থামিয়ে দেয় খেলা। তবে সামনে তাকিয়ে স্বস্তির কিছু নেই দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। ম্যাচে বাকি আছে আরও দুই দিন। ইনিংস পরাজয় এড়াতে হলেও তাদেরকে করতে হবে বিশেষ কিছু।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২২ | সময়: ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ