নয়নাভিরাম সরিষার মাঠ

টিপু সুলতান, তানোর: বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণ কেন্দ্র তানোর উপজেলায় প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষার চাষ। গত বছরের চেয়ে এবছর দ্বি-গুনেরও বেশি জমিতে চাষ করা হয়েছে সরিষার। এবছর বিপুল সংখ্যক জমিতে সরিষা চাষের ফলে, সরিষার হলুদ চাদরে অপরুপ শোভা চড়াচ্ছে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ।
তানোর উপজেলার মাঠ জুড়ে এখন হলুদের সমারোহ, যেদিকে চোখ যাই, সেদিকেই সরিষার ফুলের হলুদ চাদরে মাঠ জুড়ে অপরুপ শোভা ছড়াচ্ছে। আর এই সরিষার হলুদ ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করে মধু সংগ্রহ করতে উড়ছে মৌমাছির দল।
গত কয়েক বছর আগে কৃষকরা সরিষা চাষের পরিবর্তে আলু, গমসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতি বেশী আগ্রহী হয়ে সরিষা চাষ প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু আলুতে আগের মত লাভবান হতে না পারায় কৃষকরা আলু ও গম চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষেও বেশ আগ্রহী।
বর্তমানে অন্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ঝুকছেন সরিষা চাষে বলছেন এলাকার কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন কীটনাশকসহ চাষের খবচ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা অল্প পুজি খাটিয়ে সরিষা চাষেই বেশী লাভবান হচ্ছেন বলে কৃষকরা সরিষা চাষে বেশ আগ্রহী। ফলে গত কয়েক বছর ধরে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে সরিষা চাষ।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, তানোর উপজেলায় গত বছর ২ হাজার ৮ শ’ হেস্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। তার আগের বছর মাত্র ১৪ শ’ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিলো। কিন্তু চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ২১০ হেস্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবছর ৩ হাজার ৪১০ হেস্টর বেশী জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সরিষা চাষে প্রতি বিঘায় কৃষকের খচর হয়েছিলো ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হযেছিলো ৬ মন থেকে ৭ মন। প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি হয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত বছর সরিষা চাষে বিঘা প্রতি কৃষকের লাভ হয়েছিলো ১১ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তানোর সদর গ্রামের আদর্শ কৃষক মুন্জুর রহমানের পুত্র রাসিদুল ইসলাম সাগর বলেন, এবছর দেড় বিঘা জমিতে সরিষা ও ৮ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করছেন। সরিষা চাষে সব মিলিয়ে তার খরচ পড়বে ৫ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা।
বর্তমানে সরিষার ফুল ফুটতে শুরু করেছে, আশা করছি ভালো ফলন এবং দাম পেলে লাভ ভালোই হবে। কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সুবিধা ও সহযোগীতা না পাওয়ায ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী মুল্যের চেয়ে বেশী দামে সার ও কিটনাশক কিনতে হয়েছে, তার অভিযোগ সময়মত সরকারী মুল্যে সার না পাওয়ায় আরো ২ বিঘা জমিতে আবাদ করতে পারেননি বলেও জানান শিক্ষিত যুবক ও উদীয়মান এই কৃষক।
একাধীক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সময় মতো সরকারী মুল্যে সার না পাওয়ায় বেশি দামে সার কিনে তারা চাষাবাদ করছেন। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে জানান ধানতৈড় গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফুল আলমসহ একাধীক কৃষক।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ বলেন, সরিষা চাষে ঝুকি কম, অল্প খরচে বেশি লাভ, ফলে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী উঠছেন।
তিনি বলেন, এবছর আবহওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে বারি ১৪ ও বারি ১৮ সরিষা বীজের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি বলেও জানান তিনি। গত বছরের চাইতে এবছর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ | সময়: ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ