কম খরচে বেশী লাভ : বরেন্দ্রে বাড়ছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ

আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী: রাজশাহীতে বাড়ছে মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহ। কম খরচে লাভ বেশী হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতিতে সবজির চাষ শুরু হয়েছে। সবজি চাষিরা জানিয়েছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে যাবতীয় সহযোগিতা করছে।
মালচিং হল মূলত বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির ফলন হয় বেশি। উৎপাদন খরচ কম হয়। কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত সবজির দাম ভালো মেলায় উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষকরা।
বর্তমানে প্রায় সব সবজি উৎপাদনের সময় ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তেমনই একটি গবেষণালব্ধ পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি হল মালচিং।
জানা গেছে, রাজশাহীর বরেন্দ্রঅঞ্চলে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে গোদাগাড়ী উপজেলায় গত ৪ বছর থেকে এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপান করা হচ্ছে। প্রায় ৯ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সবজি উৎপাদন করে লাভবান হয়েছে।
মালচিং পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর এলাকার কৃষক আবেদ আলী। তিনি বলেন, প্রথমে ইন্টারনেটে দেখে আগ্রহ হয়। পরে কৃষি অফিসারের পরামর্শে এই পদ্ধতি কাজ লাগিয়ে সুফল পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পরিমাণ মতো জৈব খাবার দিয়ে জমি প্রস্তুত শেষে সারি তৈরি করা হয়। সেই মাটির সারি গুলি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর সারি গুলোর নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির চারা রোপণ করা হয়। দুটো সারির মাঝখানে ছোট্ট একটি নালা রাখা হয় প্রয়োজন মতে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন করার জন্য। চারা রোপণের পর থেকে শুধুমাত্র দেখভাল করা ছাড়া আর তেমন কোনও পরিচর্যা করতে হয় না।
উপজেলার কাদিপুর গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম ও আমির আলী বলেন, মাটির সারিগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে থাকার কারণে বাইরে থেকে কোনও ছত্রাক কিংবা রোগজীবাণু সেই সবজির চারাকে আক্রমণ করতে পারে না। তাই কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। এই পদ্ধতিতে চাষ করা গাছে রোগব্যাধি হয় না বললেই চলে। আগাছা জন্মাতে পারে না বলে খেতের পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকেরও প্রয়ােজন হয় না। সেজন্য উৎপাদন খরচও কম হয়, কিন্তু ফলন হয় দ্বিগুণ। এবার এই পদ্ধতিতে চাষ করছি আশা করা যায় ভালো ফল পাবো।
উপজেলার ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে চাষের সবচেয়ে বড় ভালো দিক হলো বরেন্দ্রঅঞ্চলে পানির স্তর প্রতিবছর ২-৩ ফিট নিচে নেমে যাচ্ছে। মালচিং পদ্ধতিতে জমি চাষ করলে পানি কম লাগছে। এতে কৃষককের সেচ কম ও খরচ কমে যাবে পাশাপাশি ফসলগুলো অনেকদিন টেকসই হবে। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের আর্থিক সমৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ জানান, মালচিং পদ্ধতি কৃষি কাজের অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি। গত তিন বছর যাবৎ এই উপজেলায় এই পদ্ধতিতে প্রায় ৯ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। নতুন ভাবে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের এটি করা হচ্ছে। এটি করে কৃষকরা খুবই লাভবান হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আগাছা ও রোগবালাই কম হয়। বিশেষ করে মাটির আদ্রতা সংরক্ষণ হয় ফল সেচ কম লাগে। মালচিং এ উৎপাদিত স্টবেরী, টমেটো, তরমুজ,শসা এসব ফলের কালার খুবই আকর্ষনীয় ও মাটির যে পুষ্টিগুণ তা পুরোপুরি থাকছে। আশা করা যায় আগামীতে এই পদ্ধতি আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে।
রাজশাহীজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচলক মোজদার হোসেন বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে কৃষকরা প্রচুর লাভবান হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় ২৯ হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে। আগামীতে এর সম্প্রসারণ আরো বেড়ে যাবে বলে জানান।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২২ | সময়: ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ