উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ সুপার ওভারে জিতল অস্ট্রেলিয়া

স্পোর্টস ডেস্ক: শেষ ওভারে লঙ্কানদের ১৯ রানের প্রয়োজনে জমে উঠল লড়াই। হলো চার-ছক্কা, মাঝে পড়ল উইকেট। কয়েক ধাপের রোমাঞ্চকর মোড় নেওয়া ম্যাচের শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান। মার্কাস স্টয়নিসের ফুলটস বল স্ট্রেইড ড্রাইভে চার মেরেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন দুশমন্থ চামিরা। ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। সেখানে অবশ্য ছিল না উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও। ছোট্ট লক্ষ্য পেয়ে অনায়াসেই পেরিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
সিডনি ক্রিকেট মাঠে রোববার জমজমাট দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সুপার ওভারে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ এ এগিয়ে গেল অ্যারন ফিঞ্চের দল। মূল ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের মিলিত চেষ্টায় ৬ উইকেটে ১৬৪ রান করে অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ায় পাথুম নিসানকার অসাধারণ ইনিংস ও শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের কার্যকর কিছু রানে ৮ উইকেটে ওই রানেই থামে শ্রীলঙ্কা।
সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারে সফরকারীরা। ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে টানা দুই চার মেরে স্বাগতিকদের ৩ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন স্টয়নিস। লড়াইয়ে লঙ্কানদের এই পর্যন্ত আনতে সবচেয়ে বড় অবদান নিসানকার। ইনিংস শুরু করতে নেমে তিনি শেষ ওভারে আউট হন ৭৩ রান করে। তার ৫৩ বলের ইনিংসে ২ ছক্কার সঙ্গে ৭টি চার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
তার বিদায়ের পর ম্যাচ নুইয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। কে জানত, নাটকীয়তা তখনও বাকি। শেষ তিন বলে ১২ রানের সমীকরণে স্টয়নিসকে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ছক্কায় ওড়ান মাহিশ থিকশানা। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ছক্কা ঠেকাতে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত পান স্টিভেন স্মিথ, সময়মতো বল ভেতরেও টেনে আনেন তিনি, কিন্তু পা লেগে যায় বাউন্ডারিতে। পরের বলে আসে বাই এক রান। আর শেষ বলে চামিরার ওই বাউন্ডারি।
মূল ম্যাচে ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া জশ হেইজলউড সুপার ওভারেও দুর্দান্ত বোলিং করে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সুপার ওভারে এই পেসারের ৬ বলে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। উল্টো গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন দিনেশ চান্দিমাল। অনেক ঘটনার এই ম্যাচে ম্যাক্সওয়েল ছেড়েছেন দুটি ক্যাচ। ৯ রানে থাকা শানাকার একটি, যিনি পরে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ১৯ বলে ৩৪ রান করে ম্যাচ জমিয়ে দেন। ৬০ রানে থাকা নিসানকার আরেকটি। এই দুটি ক্যাচ নিতে পারলে হয়ত এতদূর গড়াত না ম্যাচ।
রান তাড়ায় ইনিংসের পঞ্চম বলেই দানুশকা গুনাথিলাকাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। হেইজেলউডের শর্ট বল কাভারে থাকা ফিল্ডারের হাতে সরাসরি তুলে দিয়ে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান লঙ্কান ওপেনার। আভিশকা ফার্নান্দো, চারিথ আসালাঙ্কাও টিকতে পারেননি। ২৫ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের এক প্রান্ত আগলে রাখেন নিসানকা। তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি চান্দিমালও।
৫৫ বলে যখন দরকার ৯৮ রান তখন উইকেটে গিয়ে ঝড় তোলেন শানাকা। অ্যাডাম জ্যাম্পাকে ছক্কায় ওড়ানোর পর চার মারেন প্যাট কামিন্সকে। পরে কেন রিচার্ডসনকে চার বলের মধ্যে হাঁকান এক চার ও দুই ছক্কা। তার বিস্ফোরক ইনিংস থামে ডিপ মিডউইকেট থেকে স্মিথের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে।
ম্যাচের লাগাম অনেকটাই চলে আসে অস্ট্রেলিয়ার হাতে। কিন্তু ৪৪ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় পঞ্চাশ করা নিসানকা টানতে থাকেন দলকে। হাসারাঙ্গা ও তিনি মিলে কামিন্সকে এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় ওড়ান। চার বলের মধ্যে এই দুইজনের বিদায়ে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। তবে নিশানকার আউটের পরের বলেই থিকশানার ছক্কা আর চামিরার শেষ বলের ওই বাউন্ডারিতে স্কোরে আসে সমতা।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। কিন্তু আগের ম্যাচে ফিফটি করা বেন ম্যাকডারমট এবার খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। অনেকটা লাসিথ মালিঙ্গার মতো বোলিং অ্যাকশনের নুয়ান থুশারার বলে তিনি ধরা পড়েন লং-অন বাউন্ডারিতে। জশ ইংলিসকে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন ফিঞ্চ। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
এরপর ফিঞ্চও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। স্বাগতিক অধিনায়ক আবারও হাসারাঙ্গার গুগলিতে হন পরাস্ত। এবার উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় হন স্টাম্পড। আগের ম্যাচে একই বোলারের গুগলিতেই হয়েছিলেন বোল্ড। ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৯ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়া পায় ইংলিস ও ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে। তাদের জুটি আরেকটু আগেই ভাঙতে পারত লঙ্কানরা। দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় দুই ব্যাটসম্যানই পৌঁছে যান স্ট্রাইক প্রান্তে। শর্ট থার্ডম্যান থেকে আসা থ্রো গ্লাভসে জমাতে পারেননি চান্দিমাল।
দুই বল পরেই অবশ্য ফিরে যান ম্যাক্সওয়েল। থিকশানাকে রিভার্স সুইপ করে ব্যাট-বলে করতে পারেননি তিনি। কট-বিহাইন্ডের রিভিউ নিয়ে বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানকে ফেরায় শ্রীলঙ্কা। দারুণ ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির কাছেই ছিলেন ইংলিস। কিন্তু তাকে সেই স্বাদ নিতে দেননি হাসারাঙ্গা। ৫ চারে ৪৮ করা এই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন কাভারে থাকা দাসুন শানাকা।
স্টয়নিস ও স্মিথ তুলতে পারেননি প্রয়োজনীয় ঝড়। ১৯তম ওভারে পরপর দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান চামিরা। শেষ পর্যন্ত সফল হননি তিনি। শেষ ওভারে থুশারার বলে ম্যাথু ওয়েডের একটি করে ছক্কা-চারে দেড়শ পার করে অস্ট্রেলিয়া। মূল ম্যাচে যা যথেষ্ট না হলেও সুপার ওভারে বিজয়ের হাসি হাসে তারা। আগামীকাল মঙ্গলবার সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ | সময়: ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ