সর্বশেষ সংবাদ :

রাবিতে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকী পালন

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবনের প্রকৌশল অনুষদ গ্যালারিতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের আয়োজনে আলোচনা সভায় স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অনুষদের দুই গুণী শিক্ষক এবং রাজশাহী ও নওগাঁর চার গুণী কৃষককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনাপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্ রেজা ও নওগাঁর কালীগ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম শাহ্, রাজশাহীর মনিরুজ্জামান মনির, নূর মোহাম্মদ এবং পার্নিমা বেগম।
আলোচনা সভায় জীববিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম এবং অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, জগদীশ চন্দ্র বসু একজন অন্তর্মুখী এবং সবসময় উজানের মানুষ ছিলেন। তিনি খুব কষ্ট করে তাঁর জীবনকে পরিচালনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবসময় তাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। জগদীশ চন্দ্রের মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত ব্যথিতও হয়েছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসু হয়ত আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে যা করে গেছেন সেসব দিয়েই তাকে জীবিত রাখার সাহস এবং স্বদিচ্ছা যেন আমরা রাখতে পারি। তবেই আমরা যে আগমীতে বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম দেখতে চাচ্ছি, তা স্বার্থক হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, আমি সম্প্রতি লক্ষ্য করছি বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানী হতে চায় না, তারা আমলা হতে পছন্দ করে। তারা বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা করছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। আমরা এ বিষয়ে সম্প্রতি উদ্যোগও নিয়েছি। আমরা স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞানের ধারনা ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজনও করতে চাচ্ছি। এসময় তিনি এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা স্বভাবতই গুনীজনদের সম্মান দেই না। ফলে তারাও আমাদের থেকে সম্মান পায় না। যে দেশে গুণীজনদের সম্মান দেওয়া হয় না সে দেশে গুণীজনের জন্মও হয় না। আমাদের সে জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। আমরা গুণীজনদের সম্মান দেব, কদর করবো। নয়তো প্রকৃত গুণীজনেরা তাদের স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জ্ঞান অর্জন করবো এবং তা বিতরণ করবো। সেজন্য আমরা সেমিনারে আলোচনা করবো। সেখানে ভিন্ন কোন মতামত থাকলে তা জানাবো। আমরা যদি স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর আদর্শ নিয়ে চলি, তবে আমাদের গবেষণারগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো নিজে ও অন্যদের এবং যেসব শিক্ষার্থী গবেষণা করতে আগ্রহী তাদের ব্যবহারে সুযোগ করে দেব। তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যাবো।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার ক্ষেত্রে এসব আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণামনস্ক হওয়ার জন্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিজ্ঞানীদের অনুসরণ করতে হবে। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
সভায় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা আসরাফি নীলার সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন ও আলোচক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম. নজরুল ইসলাম জগদীশ চন্দ্র বসুর কর্মময় জীবন ও তার আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গৌর পদ ঘোষ এবং সংবর্ধনাপ্রাপ্ত দুজন গুণিজন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ