সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারায় প্রতারণা করে চাকরী প্রকৃত প্রার্থীদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় তিন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন রেখে প্রতারণা করে ‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’ পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থায়ী ভাবে বসবাস না করলেও শূন্য পদের বিপরীতে প্রদর্শিত এলাকার প্রার্থী সেজে চাকরি নিয়েছেন। তাঁদের কারণে ওইসব এলাকার মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রার্থীরাও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছয়জন প্রার্থী বলেন, অন্য জেলায় এবং স্বামীর ঘরে থাকার পরেও তথ্য গোপন রেখে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস করার পরেও বঞ্চিত হয়েছেন চাকরি থেকে। বড় বিহানালীর শামীমা নাসরিন বলেন, তিনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও চাকরি হয়নি। অথচ নাটোরে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করা এক প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছে।
দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, একই এলাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্য উপজেলা বা জেলা এমনও কি ইউনিয়ন থেকে নির্ধারিত এলাকায় দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। অন্য এলাকার প্রার্থীরা নিয়োগ পেলে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হবে।
রাজশাহী জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালে নারী প্রার্থীদের জন্য ‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’ ও পুরুষ প্রার্থী নিয়োগের জন্য ‘পরিবার পরিকল্পনা সহকারী’ পদে লোক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’র ৯টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। উপজেলার যোগিপাড়া, গোবিন্দপাড়া, বড় বিহানালী, আউচপাড়া, শুভডাঙ্গা, গণিপুর ও ঝিকরা ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট শূন্য এলাকার স্থায়ী প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। আবেদনপত্রের শেষ তারিখ ছিল ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
এদিকে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত করা হয়। গত ১২ নভেম্বর চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ নয়জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে দপ্তরটি। নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক ড.কন্তুরী আমিনা কুইন স্বাক্ষর করা চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়।
বাগমারায় নির্বাচিত নয়জন প্রার্থীর মধ্যে তিনজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্ত প্রার্থীরা হলেন গোবিন্দপাড়ার ৩/ক ইউনিটের সাথী রানী, বড় বিহানালীর এক নম্বর ওয়ার্ডের আইরিন আক্তার মিতু ও আউচপাড়া ১/খ ইউনিটের চাম্পা রানী। তাঁরা নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দুই নম্বর শর্তে উল্লেখ রয়েছে ‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’ পদের আবেদনকারীকে অবশ্যই শূন্য পদের বিপরীতে প্রদর্শিত সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের এবং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। অস্থায়ীভাবে বসবাসকারীরা এই পদে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।’
চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর থেকে ১০দিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ও সরেজমিনে গিয়ে তাঁদের তথ্য গোপন রাখার বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রার্থী ও পরিবারের সদস্যরাও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বড় বিহানালীর আইরিন আক্তার মিতুর চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাতিনন্দা গ্রামে। তিনি সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন। অথচ বাবার ঠিকানা ব্যবহার করে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর এলাকার অর্ধশত লোক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এই বিষয়ে আইরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর বাবা. আহসান হাবিব বাচ্চু এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, মেয়ের বিয়ে হলেও সে চাকরির জন্য লেখাপড়া করছিল। মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা বলে জানিয়েছেন। স্বামীর বাড়িতে থাকার পরেও কীভাবে তাঁর (বাবার) ঠিকানা ব্যবহার করে মেয়ে চাকরি পেলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে লেখালেখির কিছু নেই বলে মন্তব্য করে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান বলেন, আইরিন আক্তার মিতুর বিয়ের বিষয়টি তিনি জানেন। তথ্য গোপন রেখে কীভাবে চাকরি পেয়েছেন তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
অপর দিকে দিকে গোবিন্দপাড়ার ৩/ক ইউনিটে নিয়োগ পাওয়া সাথী রানীর ৪/৫ বছর আগে বিয়ে নওগাঁর পত্নীতলার পলাশ কুমার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। সেখানেই তিনি ঘর সংসার করছেন। অথচ তিনি নিয়োগ পাওয়ার জন্য বাবার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। ওই গ্রামের অর্ধশত ব্যক্তি সাথী রানীর বিয়ের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। এই বিষয়ে সাথী রানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা ও সাক্ষাত করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর বাবা সঞ্জিত কুমার মেয়ের চার বছর আগে বিয়ে হওয়া ও স্বামীর বাড়িতে অবস্থানের কথা স্বীকার করেছেন।
উপজেলার আউচপাড়ায় নিয়োগ পেয়েছেন চাম্পা রানী। তাঁর বাবার বাড়ি পাশের গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে। অথচ তিনি আউচপাড়ার ১/খ ইউনিটের শূন্যপদে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে চাম্পা রানী জানান, শিশুকাল থেকে মামার বাড়ি আউচপাড়ায় থাকেন। জাতীয় পরিচয়পত্রেও মামার ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তিনি মামার বাড়ি থেকেই দায়িত্ব্ পালন করবেন বলে জানিয়েছেন।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক ড.কন্তুরী আমিনা কুইন বলেন, প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের অবশ্যই স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করতে হবে। এখনো অনেক তদন্ত রয়েছে। প্রতিবেদনের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর