সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এলসি সংকটে কমেছে পণ্য আমদানি

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এলসি সংকটের কারণে পণ্য আমদানি কমেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই বন্দরে প্রবেশ করছে না কোনো ফলের ট্রাক। পাথর, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হলেও তা পরিমাণে খুবই কম। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের কয়েকশ শ্রমিক।
সরেজমিনে সোনামসজিদ স্থলবন্দর ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের আশায় বসে রয়েছেন। কিন্তু বন্দরে যে পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে, সে অনুযায়ী আসছে না ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। এতে কর্মহীন হয়ে সারাদিন বসে থেকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে শ্রমিকদের। এদিকে ডলার সংকটের কারণে এলসি না মেলায় সীমান্তের ওপারে আটকে রয়েছে পণ্যবাহী ভারতীয় ট্রাক। এমন সংকট চলতে থাকলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হুমকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
পাথর আমদানিকারক নাসিম আলী বলেন, গত মাসেও কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই চাহিদামতো পণ্য আমদানি করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) পাওয়া যাচ্ছে না। সোনামসজিদ স্থলবন্দর মূলত পাথর আমদানিনির্ভর একটি বন্দর। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যে এলসি পাওয়া গেলেও পাথরে এলসি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন পাথর ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষায় থাকলেও তা না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
আমদানিকারক তরিকুল ইসলাম জানান, চাহিদামতো লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) পাচ্ছি না। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য আমদানি। কিছু দিন ধরে বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করতে পারি না। এতে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১৫ দিনে ভুট্টা ছাড়া অন্য কোনো পণ্যই আমদানি করতে পারিনি। ফল আমদানিকারকদের মতোই একই অবস্থা পাথর আমদানিকারকদের।
স্থলবন্দরের শ্রমিক আলমগীর হোসেন বলেন, এক মাস আগেও দৈনিক ৩-৫টি ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য উঠানামা করিয়েছি। কিন্তু এখন দিনে দুটা ট্রাকের পণ্য উঠানামা করাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অলস বসে সময় পার করছি। তেমন কোনো কাজ নেই। এক মাস আগেও যেখানে ৫০০-৭০০ টাকা আয় করেছি, সেখানে এখন আয় মাত্র ২০০-২৫০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে চলা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পণ্য উঠানামানোর কাজ করেন সামসুল আলম। তিনি জানান, এভাবে কাজ করে সারা দিনের খরচ উঠছে না। ভারত থেকে আসা গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে গেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে সমাধান করা জরুরি।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের শ্রমিক ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। আমাদের নিয়মিত শ্রমিক ১ হাজার ২৬৬ জন হলেও ধান কাটার কারণে তা এখন অর্ধেকে নেমেছে। এরপরও শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিদিন যেখানে ৪০০-৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, সেখানে এক মাস থেকে তা নেমেছে ১৫০-২০০ ট্রাকে।
সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান রাজু বলেন, কিছু দিন থেকে আমাদের এলসিগুলো একটু দেরিতে হচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।
পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের পোর্ট ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, গত মাস থেকেই পণ্য আমদানি কমেছে। আগে প্রতিদিন ৩৫০-৪০০ ট্রাক প্রবেশ করতো। বর্তমানে ২৫০-২৮০ ট্রাক প্রবেশ করছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আমাদের জানা নেই।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা উদ্ধব চন্দ্র পাল বলেন, কী কারণে পণ্য আমদানি কমেছে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নিষেধ রয়েছে। তাদের অনুমতি ছাড়া কথা বলা যাবে না। তবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পণ্য আমদানি কমেছে। গত বছর তাজা ফল আমদানি হয়েছিল ৩১৩ ট্রাক, চলতি বছর হয়েছে ৭১ ট্রাক। চলতি মাসে ফল আমদানি একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমেছে। পাথর আমদানি হয়েছিল ২৫ হাজারে ৫৯৫ ট্রাক, এবার হয়েছে ২ হাজার ১২৭ ট্রাক। অন্য পণ্য গত বছর আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ৯৭০ ট্রাক, এবার হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ ট্রাক।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২ | সময়: ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ