কারামুক্ত ফখরুল ও খসরু

সানশাইন ডেস্ক: ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর জামিনে মুক্তি পেলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ফুল ছিটিয়ে তাদের বরণ করে নেন। এ সময় পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়ের ভয় নাই, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘আমীর খসরু ভাই এগিয়ে চলো আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘মহাসচিবের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি’, ‘খসরু ভাইয়ের মুক্তি আন্দোলনের শক্তি’, ইত্যাদি স্লোগানের পাশাপাশি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম ধরেও স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল ও খসরু যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তখন তাদের দল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে ছিল। আর তারা যখন মুক্তি পেলেন, ততদিনে নির্বাচন হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মত ক্ষমতায় এসেছে।
হুড খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নেতা-কর্মীদের অভিবাদন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। ইনশাল্লাহ এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে।” বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন’ অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় জানান মির্জা ফখরুল।
পরে আমীর খসরু বলেন, “ওরা রাষ্ট্র শক্তিকে কবজা করে ক্ষমতা দখল করেছে, বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে প্র্রত্যাখান করেছে। তারা নির্বাচনে নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। “আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে, ততদিন এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”
ফখরুলকে বাড়ি নিয়ে যেতে কারাগারের ফটকে উপস্থিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম এবং একান্ত সহকারী ইউনুস আলী। আর খসরুকে নিতে এসেছিলেন তার ছেলে ইস্রাফিল খসরু। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু, শামীমুর রহমান শামীম, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শায়রুল কবির খানসহ অঙ্গসংগঠনের কয়েকশ নেতা-কর্মী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মী মোটর সাইকেল নিয়ে দুই নেতার গাড়ি ঘিরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আর আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ২ নভেম্বর রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ হত্যার মামলায় রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি এবং খসরুর বিরুদ্ধে দশটি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাটি ছাড়া সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পেয়ে যান। কিন্তু এক মামলায় আটকে থাকায় তাদের মুক্তি মিলছিল না। শেষ পর্যন্ত ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদের বুধবার বিএনপির এ দুই জ্যেষ্ঠ নেতার নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। সব মামলা জামিন হয়ে যাওয়ায় তাদের মুক্তির বাধা কাটে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪ | সময়: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ