রাণীনগরে অটোরাইস মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

রাণীনগর প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে লোড বৃদ্ধির ডিমান্ড চার্জ আদায়ের অযুহাতে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর এক সাথে ডিমান্ড চার্জ আদায়ে অটোমেটিক রাইস মিলের সংযোগ বিচ্ছিন্নের করা হয়েছে। রোববার দুপুরে উপজেলা সদরে আব্দুস ছাত্তার শাহার অটোমেটিক রাইস মিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মিল মালিক বলছেন,২০১৯ সালে মিলে লোড বৃদ্ধির আবেদন এবং ফি জমা দিলেও গত তিন বছরে বিদ্যুৎ বিলের কাগজে বৃদ্ধিকৃত চুক্তিবদ্ধ লোড এবং লোডের ডিমান্ড চার্জ বসানো হয়নি।
রাণীনগর উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের মৃত সখিন উদ্দীনের ছেলে অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক আব্দুস ছাত্তার শাহ অভিযোগ করে বলেন,আত্রাই-নওগাঁ সড়কের উপজেলা সদরে শাহি ফিলিংষ্টেশন সংলগ্ন অটোমেটিক রাইস মিল স্থাপন করে ব্যবসা করে আসছেন। মিলে বিদ্যুতের চাহিদা বেরে যাওয়ায় ২৮৩ কিলোওয়ার্ডের স্থলে আরো ১৬৭ কিলোওয়াড সংযুক্ত করে মোট ৪৫০কিলোওয়ার্ড লোড বৃদ্ধির জন্য গত ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাণীনগর জোনাল অফিস বরাবর আবেদন করেন।
এর পর নিয়ম অনুযায়ী পল্লীবিদ্যুৎ কারিগরি বিভাগ পরিদর্শণ পূর্বক লোড বৃদ্ধির ডিজাইন ও প্রাক্কলন প্রস্তুত করে প্রাক্কলিত ফি জমা দিতে পত্র দেয়া হয়। পত্র অনুযায়ী ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর নির্দিষ্ট ফি জমা করেন। এর পর দীর্ঘ দুই বছর অতিবাহিত হলেও অটোমেটিক মিলে লোড বৃদ্ধি করা হয়নি দাবি করে চুক্তিবদ্ধ লোর্ড বৃদ্ধির জন্য গত ২০২১ সালের ২ফেব্রুয়ারী আবারো আবেদন করেন।
এর পর চলতি বছরের ৫জুন হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ লোড বৃদ্ধি করা হয়েছে দাবি করে এক সাথে ২৯মাসের ডিমান্ড চার্জ দুই লক্ষ ৯০ হাজার ৫৮০টাকা পরিশোধের জন্য পত্র দেয়া হয়। এর পর আবারো তিনি চুক্তিবদ্ধ লোড বৃদ্ধি করা হয়নি দাবি করে রাণীনগর জোনাল অফিসের মাধ্যমে নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি জেনারেল ম্যানেজার বরাবর আবেদন করেন।এরপর রাণীনগর জোনাল অফিস থেকে আবারও ডিমান্ড চার্জ পরিশোধের জন্য পত্র দেন। ছাত্তার শাহ বলেন,বিদ্যুৎ অফিস থেকে পত্রের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১২ডিসেম্বর থেকে ১৬৭ কিলোওয়ার্ড লোড বৃদ্ধি করা হয়েছে দাবি করে গত জুন মাস থেকে ডিমান্ড চার্জ পরিশোধের জন্য কয়েকটি পত্র দেয়।
কিন্তু লোড বৃদ্ধির টাকা জমার পর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলের কাগজে আগের চুক্তিবদ্ধ ২৮৩কিলোওয়াড লোড দেখানো হয়েছে এবং নিয়মিত বিল পরিশোধ করেছি। এরপর দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর গত মে মাসে আবেদনকৃত অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ ১৬৭ কিলোওয়ার্ড লোড যুক্ত করে মোট ৪৫০ কিলোওয়ার্ড লোডে ডিমান্ড চার্জ দেখানো হয়। তিনি বলেন,আবেদনের প্রেক্ষিতে মিটারে অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ ১৬৭ কিলোওয়াড লোড এপ্রিল পর্যন্ত সংযুক্ত না হওয়ায় সরকারী খাদ্য বিভাগ হতে মিলের অনুকূলে চাল বরাদ্দ কম পেয়েছেন।
যেহেতু পূর্বে মিটারে অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ লোড সংযুক্ত করা হয়নি সে কারনে মে মাসের বিলে ডিমান্ড চার্জ দুই লক্ষ ৯০হাজার ৫৮০ টাকা বাদ দিয়ে বিল সংশোধনের জন্য জোনাল অফিসে আবেদন করলে অফিস অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জ বাদ দিয়ে বিল সংশোধন করে দেন। এর পর আবারো পত্রের মাধ্যমে ডিমান্ড চার্জ দাবি করলে বাধ্য হয়ে চলতি মাসের ৩নভেম্বর অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জ অবৈধ দাবি করে নওগাঁ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ছাত্তার শাহ বলেন,মামলার নোটিশ পাওয়া মাত্রই ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ রোববার আমার অটোমিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তিনি বলেন গত মে মাসের পূর্ব পর্যন্ত কোন বিলেই অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ লোড এবং লোডের ডিমান্ড চার্জ সংযুক্ত করা হয়নি। মিলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় একদিকে যেমন ব্যবসায়ীকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন,অন্য দিকে মিলের প্রায় অর্ধশত শ্রমীক বেকার হয়ে পরেছেন। আমি এঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১এর রাণীনগর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আকিয়াব হোসেন বলেন, ছাত্তার শাহার অটোমেটিক রাইস মিলে ২০১৯ সালের ১২ডিসেম্বর চুক্তিবদ্ধ অতিরিক্ত ১৬৭ কিলোওয়ার্ড লোড বৃদ্ধি করা হয়েছে। অফিসিয়ালভাবে লোডবৃদ্ধির কাগজপত্র সদস্য সেবা বিভাগ থেকে বিলিং শাখায় প্রেরণ না করাই অতিরিক্ত লোডের ডিমান্ড চার্জ বিদ্যুৎ বিলের সাথে যোগ করা হয়নি। ফলে বিষয়টি নজরে আসায় মোট ২৯ মাসের অতিরিক্ত চুক্তিবদ্ধ লোডের ডিমান্ড চার্জ বিদ্যুৎ বিলের কাগজে এক সঙ্গে দেয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কেন বিলে ডিমান্ড চার্জ তুলে দেয়া হয়নি তা ক্ষতিয়ে দেখে দোষিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন ডিমান্ড চার্জ আদায়ে বার বার পত্র দেয়ার পরেও চার্জ পরিশোধ না করায় সংশ্লিষ্ঠ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ