গোমস্তাপুরে কুমির আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে পূণর্ভবা ও মহানন্দা নদীতে কুমিরের বিচরণে আতঙ্কে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে রহনপুর পৌর এলাকার বেগুনবাড়ি মহানন্দা ঘাট ও শুক্রবার সকাল থেকে পৌর এলাকার গুজরঘাট ও বেলী ব্রীজ এলাকায় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত একটি বিশাল আকারের কুমিরের দেখা পাওয়া যায়। কুমির লোকালয়ে আসায় নদীর দুই ধারে উৎসুক জনতার ঢল লক্ষ করা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ফজলুর রহমান জানান, আমি মহান্ত ঘাটে কুমিরটিকে দেখেছি। নদীতে গোসলে নামতে অনেকেই ভয় পাচ্ছে। এলাকাবাসীর মধ্যে এ নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা বণ্যপ্রাণী অধিদপ্তরকে অনুরোধ করছি, এ কুমিরটিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
মহান্ত ঘাট এলাকায় মাছ শিকারকারী এক জেলে পরান আলী জানান, আমি আজ সকাল ৯টার দিকে বেলী ব্রিজের নিচে কুমিরটিকে দেখেছি। কুমিরটি বেশ বড়-সড় আকারের। নদীর পাড়ে উঠে কয়েকটি হাঁসকে সেই কুমিরে খেয়েছে। অনেকেই বলছে কুমির নাকি আরও একটি আছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সীমান্তের ওপারে ভারতের মালদা জেলার মহানন্দা নদীতে এ ধরনের একটি কুমিরের চলাচলের ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয়েছে। যেহেতু ভারতের মহানন্দা নদীর সাথে বাংলাদেশের মহানন্দা নদীর সংযোগ রয়েছে। সেহেতু ধারনা করা হচ্ছে ভারত থেকেই মহানন্দা নদী হয়ে পূণর্ভবা নদীতে কুমিরটি প্রবেশ করে থাকতে পারে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, কুমির একটি হিংস্র স্বভাবের প্রাণী। আর এই নদীতে পানির পরিমাণ বেশী হওয়ায় এখন আমরা ধরতে পারছি না। তাই কুমিরের দেখা পেলে অতি উৎসাহী হয়ে বিরক্ত করবেন না। বাচ্চাদের নদীর কিনারায় যেতে দিবেন না। দিনে ও রাতের বেলায় মাছ আহরণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। ছোট ছোট নৌযান (নৌকা ও ভেলা) চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখুন। কুমিরের রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছুড়বেন না এবং তাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। রাতের বেলায় নদী ও নদী পাড়ের সকল কাজ সাময়িক বন্ধ রাখুন। নদী তীরবর্তী এলাকায় সাময়িকভাবে পশু চরানো থেকে বিরত থাকুন। তাই এলাকাবাসীদের সতর্ক করার জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং প্রচার করে আতংকিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করছি।
তিনি আরও বলেন, কুমিরটি স্থান পরিবর্তন করছে। আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধা পর্যন্ত থেকে কুমিরটি উদ্ধার করতে পারিনি। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী কুমিরকে বিরক্ত করা, রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছোঁড়া, তাড়ানোর চেষ্টা করা, ধরা, মারা, ত্রুয়-বিক্রয়, পাচার করা, পরিবহন করা, হত্যা ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ (পাঁচ) বছর কারাদন্ড অথবা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
এ বিষয়ে রহনপুর পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান খান জানান, রহনপুর পূণর্ভবা নদীতে কুমার দেখতে সাধারণ মানুষের ভীড় দেখা যাচ্ছে। তাই বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনাক্রমে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য মাইকিং প্রচার করেছি। আর এখন যেহেতু শীতকাল চলছে তাই নদীর পাড়ে উঠে কুমির রোদ পোহাচ্ছে। তখন যেন তাকে কেউ ঢিল না ছুড়ে বিরক্ত না করে, সে বিষয়ে জনগনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ | সময়: ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ