সমালোচনার ঝড় : মোহনপুরে ভূমিহীন পরিবারের ঘরের টিন খুললেন এসিল্যান্ড

মোহনপুর প্রতিনিধি: ‘মুজিব শতবর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দেওয়া হচ্ছে বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছে সারা বিশ্ব।
মোহনপুর উপজেলায় ভূমিহীনদের জন্য শতভাগ বাড়ি নির্মাণের আওতায় থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এ মহৎ উদ্যোগকে ম্লান করে ভূমিহীন পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঘরের টিনের চালা খুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাশ এর বিরুদ্ধে।
বয়োবৃদ্ধ এর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঘরের টিন খুলে নেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধ কাজেম উদ্দিন শেখ (৮২) ও তার স্ত্রী নুরেছা বেগম (৬০)। একজন সরকারি দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার অমানবিক কাজের নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সুশীল সমাজ।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে জানা গেছে, উপজেলার ধূরইল ইউনিয়নের পোল্লাকুড়ি গ্রামে ১২৪ নম্বর জেএল ১ নম্বর খতিয়ান দাগ নম্বর ২৮৮ শ্রেণী ডহর পরিমান দেড় শতক জমিতে বাড়ি করে গত ৪০ বছর ধরে বাস করছেন কাজেম দম্পতি। তাদের দখলীয় সরকারি জমিতে কু-নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী জালাল উদ্দিন, ফুকু মাহবুল, লালু, মাসুদ, জাহাঙ্গীর আলম, মনসুর গংদের। কাজেম উদ্দিন এর দখলে থাকা একমাত্র অবলম্বন খাস জমিটুকু দখলে নিতে চায় তারা। ৎ
একারণে তাদের উচ্ছেদ করতে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন জালাল উদ্দিন দিং। আবেদন পেয়ে এসিল্যান্ড হরিহরপুর ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামিমা আকতারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগকারীদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাশ “শুধুমাত্র একবার উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করেন। ভূমি অফিস বলছেন তিনটি নোটিশ দিয়েছেন আর ভুক্তভোগীরা বলছেন তারা একটি নোটিশ পেয়েছেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে হটাৎ থানা পুলিশ ও মিস্ত্রিকে সাথে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করে অসহায় বয়োবৃদ্ধের ২টি ঘরের টিনের সম্পূর্ণ চালা খুলে নেন। অমানবিক এ ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত হলে এসিল্যান্ড চলে যান। এরই মধ্যে ৭ জন মিস্ত্রিরা ২টি ঘরের ছাউনি টিন খুলে ফেলেন।
এঘটনার বিস্তারিত জানান ভুক্তভোগী ও তার পরিবার। তারা বলেন, তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল বাড়ির টিনের চালা খুলে নেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বাধ্য হয়ে রাত দিন পার করেছেন। সারারাত খোলা আকাশের নিচে রাত বাস করার ফলে তার স্বামী কাজেম শ্বাস কষ্ট বেড়ে গেছে। তাছাড়া ওই জায়গাটি ছিল তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল যেখানে তাঁরা হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষ করে করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর স্বামী বৃদ্ধ হওয়ার কারণে কোন কাজকর্ম করতে পারেনা। তারা এখন কোথায় যাবেন? এমন প্রশ্ন করে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন নুরেছা বেগম। তারা যে ভূমিহীন বর্তমান চেয়ারম্যানসহ সাবেক চেয়ারম্যানদের প্রত্যয়ন সনদ সেটায় প্রমাণ করে। তারা দুজনে সরকারি সুবিধা বলতে বয়স্কভাতা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল পান।
এবিষয়ে ধূরইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা গৃহীনদেরকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। আর অন্যদিকে খাস জমিতে প্রায় ৪০ বছর যাবত বসবাসকারী অসহায় ভূমিহীন ফকির সম্প্রদায়ের দুইজন বৃদ্ধের একমাত্র মাথা গোজার ঠাই টুকু উচ্ছেদ করলেন এসিল্যান্ড। তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরে মাননীয় রাজশাহী ৫৪, পবা-মোহনপুর-৩ আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন হত দরিদ্র পরিবারকে নতুন বাড়ি করে দিবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রিয়াংকা দাশ জানান, সরকারি বিধি মেনে সব করা হয়েছে।
ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুৃজ্ জোহ্রা, এসিল্যান্ড প্রিয়াংকা দাশ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিপুল কুমার মালাকার, হরিহরপুর ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শামিমা আকতারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আগামী ২দিনের মধ্যে ওই পরিবারের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেছেন তিনি।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২ | সময়: ৬:১০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ