বিশ মিনিটে একবিঘার ধান কাটা মাড়াই শেষ, খরচ ২৫০০ টাকা

মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: কৃষির যান্ত্রিকীকরণ আজ হাতের মুঠোয়। এটি কল্পনা নয় যাদু নয় বাস্তব। এক বিঘা জমির ধান কাটাই মাড়াই করতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট আর এতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২৫০০ টাকা। অথচ শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা ধান কাটাই মাড়াই করতে সময় লাগবে তিন দিন। আর এতে খরচ পড়বে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা।
বাগমারা সহ আশেপাশের এলাকায় কৃষির এই যান্ত্রিকীকরণ শুরু হয়েছে বহু আগেই। কম্বাইন্ড হারভেস্টার (ধান কাটাই-মাড়াই মেশিন) দিয়ে এলাকার কৃষকরা অতি অল্প সময়ে স্বল্প খরচে ধান কাটাই মাড়াই করছেন। তবে এই যন্ত্রটির ব্যাপক মূল্য। সরকার পঞ্চাশ শতাংশ ভূর্তুকি দিয়ে মাঠ পর্যায়ে এর ব্যবহার কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছে না। কৃষক নিতে চাইলেও সামর্থে কুলোচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাগমারায় এবার প্রায় তিন হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৪ মেট্রিক টন হিসাবে এখানে ১৪ হাজার ৮শ মেট্রেক টন ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এই পরিমান ধান কাটাই মাড়াই করতে প্রচুর হারভেস্টার মেশিন প্রয়োজন হলেও বাগমারায় রয়েছে মাত্র বিশটি। তাও অর্ধেক বিকল।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও দক্ষ মেকানিকের অভাবে এগুলো সচল করা যাচ্ছে না। এক কথায় কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এলাকার কৃষকরা বলেছেন, বিভিন্ন কোম্পানী ও মান ভেদে প্রতিটি হারভেস্টার মেশিনের দাম ২২ থেকে ৩২ লক্ষ টাকা। এসব মেশিন ক্রয়ে সরকার পঞ্চাশ শতাংশ ভুর্তুকী দিয়ে থাকে। তারপরও এটি ক্রয় করতে কৃষকের সামর্থ কুলোচ্ছে না।
গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের পাঁচ বিঘা জমির জমির আমন ধান কাটতে দেখা যায় হারভেস্টার মেশিন দিয়ে।
কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এই মেশিনের মালিকের বাড়ি কুমিল্লা। পাশ্ববর্তী নওগাঁর রাণীনগরের জনৈক ড্রাইভার এটি ভাড়া নিয়ে বাগমারা এলাকায় ধান কাটাই মাড়াইয়ের কাজ করছেন। তিনি বিঘা প্রতি পঁচিশ টাকায় ধান কাটাই মাড়াইয়ের কাজ করছেন। মেশিনটি দিয়ে একই সাথে ধান কাটাই ও মাড়াইয়ের কাজ করা যায়।
একই এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, এই এক বিঘা জমির ধান কাটাই মাড়াই করতে সময় লাগবে তিন দিন। আর এতে খরচ পড়বে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা।
তার মতে, মেশিনের ব্যাপক দাম সেই তুলনায় কৃষকের সামর্থ কম হওয়ায় এটি মাঠ পর্যায়ে বিস্তার লাভ করতে পারছে না। এছাড়া মেশিনের যন্ত্রাংশ ও দক্ষ মেকানিক হাতের কাছে না থাকায় কৃষক এটি ক্রয় করার ঝুকি নিতে চাচ্ছে না। একই গ্রামের কৃষকরা জানান, দিন দিন যে হারে ধান কাটা শ্রমিক সংকট ও মজুরী বৃদ্ধি দেখা দিচ্ছে সে বিবেচনায় এই মেশিনের কোন বিকল্প নেই। এর সমাধনে কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমরা কৃষক প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবসে হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ব্যাপক ভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকি।
হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি ও কৃষকের সামর্থ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এমামুল হক জানান, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম আমার জমির ধান হারভেস্টারে কাটা হচ্ছে। এটি খুব সাফল্যজনক খবর। কৃষক পর্যায়ে এই মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনা সরকার ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভূর্তুকি মূল্যে চলতি বছর এলাকায় বিশটি মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। আগামী বছর আরো দ্বিগুন বিতরণ করা হবে।
প্রয়োজনে কৃষক সমাবেশ করে তাদের মতামত নিয়ে কীভাবে এই মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করা হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৩ | সময়: ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ